Main Logo
আপডেট : ২৩ মার্চ, ২০২৪ ১০:৩৬

ধারাবাহিক উপন্যাস- পর্ব-০৩

নিশিকথা

ওমর ফারুক

নিশিকথা

নাহিদ আহমেদের স্ত্রী জবা আহমেদ ব্যাংকের বড় চাকুরে। প্রতিদিন সকাল ৮ টায় বাসা থেকে বের হন ব্যাংকের উদ্দেশ্যে। আজো তার ব্যতিক্রম করেননি। বাড়িতে সকাল ৮ টার দিকে পত্রিকা এলেও তিনি পত্রিকার হেডলাইন ছাড়া আর কিছু পড়ার সুযোগ পান না। ভেতরের পাতাগুলো কাজের ফাঁকে অফিসেই পড়ে থাকেন। আজও তৈরি হতে হতে পত্রিকার প্রথম পাতার খবরের শিরোনামগুলো দেখে নাহিদ আহমেদের কাছে দিয়ে বেরিয়ে যান। 

অফিসে ঢোকার পর সবাই যেন কি একটা বিষয় নিয়ে বলবালি করছিলেন। জবা আহমেদ ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই চুপ করে গেলেন সবাই। বিষয়টা ভালো ঠেকেনি তার কাছে। কিন্তু কি নিয়ে তারা অলােচনা করছিলেন , সে বিষয়টা জানার আগ্রহ বোধ করেননি জবা। কারো কোনো বিষয়ে নাক গলাতে তিনি একদমই পছন্দ করেন না। এসব নিয়ে ভাবতেও ভাল লাগে না তার। তিনি জানেন, বেশিরভাগ মানুষই ফিসফাস করে কথা বলতে পছন্দ করেন। অফিসে কোন একটা ঝামেলা হলে তা নিয়ে সমালোচনার শেষ থাকে না। একজনের কাছ থেকে আরেকজন শোনার জন্য অতি আগ্রহে চেষ্টা করে। কেউ কেউ কাজ ফেলে রেখে ক্যাণ্টিনে গিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তোলে। সেখানেও  আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়। সেখানে বোঝা যায় কোন সহকর্মীর সঙ্গে কার খুব মিল, বিশ্বাস। বিশ্বাসী লোক না হলে গসিপিং করে মজাও নেই। যদি কোন কথা বলতে গিয়ে ভেটো আসে তা হলে গসিপিংয়ের মজাটাও থাকে না। এসব বিষয় ব্যাংকে যোগদানের পর থেকেই দেখেছেন তিনি।২৫ বছরে এসব তার গা সওয়া হয়ে গেছে। তবে কাউকে তিনি তার অপছন্দের কথা বলেননি। তাতে কী! সহকর্মীরাতো আর মূর্খ নন। এ কারণেই তারা কোন গসিপিংয়ে জবার সঙ্গে শরিক হন না। আজও অফিসের কোন ঘটনা নিয়ে হয়তো তারা গসিপিং করছিল। জবা তার টেবিলে বসেই ফাইল নাড়াচাড়া শুরু করেন।
জবার পাশের টেবিলেই বসেন সিনিয়র অফিসার হায়াৎ আলী। তিনি একবার তার মেয়ের কথাটা উঠাতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেন। তবে হায়াৎ আলী জানেন, জবা আর কারো সঙ্গে বিষয়টা শেয়ার না করতে চাইলেও তার সঙ্গে করবে। আধা ঘন্টার বেশি হয়ে গেল, কিন্তু জবা কোনাে কথাই বলছেন না। তা হলে নিশ্চয়ই তার মনটা আজ ক্ষুব্দ। যদি তার মেয়েকে নিয়ে এমন একটি বিষয় ছাপা হতো, তা হলে কেমন লাগতো। মনে মনে আন্দাজ করার চেষ্টা করছেন হায়াৎ আলী। অন্য টেবিল থেকেও কোনো কোনো অফিসার বারবার তাকাচ্ছিলেন জবার দিকে। বিষয়টি জবার চোখে পড়ে। একবার মনে হয় কপালের টিপটা বোধ হয় ঠিক জায়গায় বসানো হয়নি। সেটাই সবাই দেখছেন বারবার। এতো ব্যস্ততার মধ্যে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় টিপটা ঠিক জায়গায় বসতে নাও পারে। তাতে এতাে দেখার কি আছে?  এক পর্যায়ে তিনি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ফ্রেস রুমে যান। আয়নায় দেখেন, না সব ঠিক আছে। বরং অন্য দিনের চেয়ে আজই তাকে বেশি সুন্দরী লাগছে। তা হলে কি সহকর্মীরা তার সৌন্দর্য্য দেখছে। এই বৃদ্ধ বয়সে সৌন্দর্য্য দেখারই বা কি আছে, ভেবে কূল কিনারা করতে পারেন না জবা। 

চলবে---

উপরে