ধারাবাহিক উপন্যাস- পর্ব-০৪
নিশিকথা
ওমর ফারুক
আয়নায় চোখ ফেলে খানিক হেসে ফেলেন জবা। ২৫ বছরে দু'বার কপালের টিপটা ফ্রেসরুমের আয়নায় গিয়ে দেখলেন তিনি। প্রথমবারের কথা তার মনে পড়ে যায়। সে দিনটির কথা মনে হতেই আরো কিছুক্ষণ নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করলো তার। জবার স্পষ্ট মনে আছে সে দিনটির কথা। ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারে বসে টাকা দিচ্ছিলেন লোকজনকে। হঠাৎ এক যুবক টাকা নিতে গিয়ে তার দিকে অপলক তাকিয়ে ছিল। যাা বিরক্তির উদ্রেক করার কথা, কিন্তু সেদিন মোটেও বিরক্ত হননি জবা। বরং তিনিও এক ফাঁকে যুবককে নয়নভরে দেখে নিয়েছিলেন। এরপর টাকা নিয়ে যুবক চলে যায়। ব্যাংকের প্রধান গেট পেরুনোর আগেও একবার পেছন ফিরে তাকিয়েছিল সেই যুবক। সেদিন জবার মনে পড়েছিল কি এমন সৌন্দর্য্য তার মধ্যে দেখতে পেল সেই যুবক। এই কারণে জবা কিছুক্ষণ পরই ফ্রেস রুমে গিয়ে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখেছিলেন। সেদিন তার কপালের টিপটা ঠিক আজকের মতো ছিল। আজকের মতোই সুন্দরী লাগছিল তাকে।
যুবক চলে যাওয়ার দু'দিন পর আরেক যুবক এসে সরাসির ব্যাংকের ম্যানেজারের কাছি গিয়েছিল। বন্ধুর জন্য জবাকে পছন্দ হয়েছে এমন কথা অকপটে বলে ফেলতেও দ্বিধা করেনি। ষ্পষ্টভাষী যুবককে বেশ পছন্দ হয়েছিল ব্যাংক ম্যানেজারের। যুবক ম্যানেজারকে জানিয়েছিল ব্যাংকের সুন্দরী মেয়েটিকে তার বন্ধুর পছন্দ হয়েছে। তার বন্ধুটি বড় পদে সরকারি চাকরি করে। পাত্র হিসেবেও খারাপ না। ব্যাংক ম্যানেজার খুশি হয়েই ঘটকালি করেছিলেন সেদিন। আর বড় কর্মকর্তা নাহিদ আহমেদের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন জবাকে। পরবর্তী সময়ে জবা জানতে পারেন , নাহিদ আহমেদ তাকে দেখেই পছন্দ করে ফেলেছিলেন। কিভাবে কি করা যায় তা নিয়ে পরামর্শ করেছিলেন বন্ধু তারিকের সঙ্গে। তারিকই ম্যানেজারের সঙ্গে সরাসির কথা বলতে গিয়েছিলেন। বিয়ের পর থেকে তারিকও জবার বন্ধু বনে যায়। তবে তারিক তাকে ভাবী বলেই সম্বোধন করে। হঠাৎ জবার সম্বিৎ ফেরে। মনে পড়ে টেবিলে অনেক কাজ পড়ে আছে। দ্রুত তিনি ফ্রেস রুম থেকে নিজ টেবিলে গিয়ে বসেন।
আরও একবার জুনিয়র অফিসার মনির হাসান তার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলেন খাতার দিকে। বিষয়টি চোখে পড়ে জাবার। তার তাকানোটা সুবিধের মনে হয়নি জবার কাছে। মনির অন্যদিন তাকে দেখেই দাঁড়িয়ে সালাম দিতো। আজ টেবিল থেকে নড়লই না। তা ভেবেও খটকা লাগে জবার। অথচ মনিরের সঙ্গে নিশির বিয়ের কথা বার্তা চলছে।
যখন থেকে কথা বার্তা শৃুরু হয়েছে তখন থেকেই তাকে শাশুরির মতোই সম্মান করে মনির। আজ এমন কি হলো যেন সব পাল্টে যাচ্ছে। তা হলে কি গতকাল কোন কাজে জবা ভুল করে গেছে। তাতে ব্যাংকের সুনাম নষ্ট হওয়াসহ ক্ষতিও হয়েছে। কিন্তু এমনতো হওয়ার কথা নয়। ক্যাশ মিলানোর পর তিনি বেরিয়েছেন। ম্যানেজার সাহেব তাকে ডেকে বরং কাজের প্রশংসাই করলেন। বললেন, বয়স হলেও কাজে কোন ধরনের অলসতা তিনি জবার মধ্যে দেখতে পান না। এমন যদি সবাই হতো তা হলে জনবল আরো কম দিয়েও ব্যাংক চালানো যেতাে।
কাজে মনোযোগ দেন জবা আহমেদ। অনেক ফাইল তার সামনে। গতকাল সব কাজ শেষ করে যেতে পােরননি। তিনি একের পর এক ফাইলে চোখ ফেলতে শুরু করলেন।
ঠিক ওই সময় তার মোবাইলে ফোন আসে। টেবিলের এক পাশে রাখা ব্যাগের ভেতর মোবাইলটা বেজে উঠে। বিরক্ত হন জবা। প্রতিদিন তিনি রিঙ্গার সাইলেন্ট করে কাজ করেন। আজ কেন যে করলেন না, এ জন্য নিজের ওপরই রাগ হচ্ছিল তার। শব্দটা শুধু তার নয় অন্যদেরও কানে আসে। পাশের টেবিল থেকে হায়াৎ আলী বললেন-
আপা আপনার ফোন বাজেছ।
হায়াৎ আলীর কথায় ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বের করেন। তার ইচ্ছে ছিল যেই ফোন করুক, না ধরে সুইচ স্টপ করে দেবেন। কিন্তু মনিটরে দেখতে পান তারিকের নাম ভাসছে। এই ফোনটা তাকে ধরতেই হবে। কেন না তারিকের ফোন তিনি ধরেননি, এমন ঘটনা মনে করতে পারছেন না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটি ধরলেন।
হ্যালাে, স্লামালেকুম।
তার গলা স্বাভাবিক। চমকে যায় তারিক। মেয়ের এত বড় সমস্যা হচ্ছে আর তার বাবা-মা নাকি স্বাভাবিক আচরণ করছে। অথচ তারিক নিজেই জ্বলে-পুড়ে মরছে।
ভাবী ভালো আছেন?
ভালো আছি ভাই।
আপনি কি অফিসে?
প্রশ্ন শুনে রসিকতা করতে ইচ্ছে করলোপ জবা আহমেদের।
অফিস নয়তো কোথায়? আপনার বন্ধু কি আমাকে নিয়ে মঙ্গলগ্রহে ঘুরতে যাবেন নাকি। তারিক ভাই জরুরি কোন কাজে ফােন করেছেন?
চলবে....