ধারাবাহিক উপন্যাস- পর্ব-০৮
নিশিকথা
ওমর ফারুক
বিজ্ঞাপনের বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়িয়েছে। ধাসার ওসি পত্রিকা হাতে পাওয়ার পরই তার চোখ পড়ে বিজ্ঞাপনটির দিকে। তিনি ঘটনা বুঝে উঠতে পারেন না। বিজ্ঞাপনটার মানে বোঝার চেষ্টা করেন বার কয়েক। বিজ্ঞাপনের চারপাশে প্রতিষ্ঠানের নাম খোঁজেন। কারা তাকে ধরিয়ে দিতে বলছে তাও বুঝতে পারছেন না।
ডিউটি অফিসারের রুমেও তখন বিজ্ঞাপনটি নিয়ে আলোচনা চলছিল। কায়েস নামের এক সাব-ইন্সপেক্টর ডিউটি অফিসারকে জানালেন, তিনি এই মেয়েটিকে চেনেন। কথা শুনে ডিউটি অফিসার বিস্মিত। পর মুহূর্তেই তার বিস্ময় কাটে।সাব-ইন্সপেক্টর জানান, এই মেয়েটির বাড় এই থানা এলাকাতেই। প্রায় দিনই থানার সামনে দিয়ে যেতে দেখেছেন। তার কথা শুনে দরজার সামনে দায়িত্বপালনকারী এক কনস্টেবলও ভেতরে আসেন। ডিউটি অফিসারের কাছ থেকে পত্রিকাটা নেয়ার জন্য এগিয়ে আসেন। বিষয়টি বুঝতে পারেন ডিউটি অফিসার। তিনি কনস্টেবলকে বলেন-
কি হাকিম মিয়া পত্রিকাটা দেখতে চাচ্ছেন?
বৃদ্ধ কনস্টেবল আগ্রহ নিয়ে বলেন-
স্যার যদি একটু দেন।
ডিউটি অফিসারের কাছ থেকে পত্রিকাটা নিয়ে বৃদ্ধ কনস্টেবলও নিশ্চিত করে মেয়েটিকে তিনি অনেকবার থানার সামনে দিয়ে যেতে দেখেছেন। সাব-ইন্সপেকটর ভাবলেন বিষয়টা ওসি সাহেবের কানে দেওয়া দরকার। এই সুযোগে একটু তেলও মারা যাবে। নতুন ওসি এসেই তার উপর ক্ষেপে রয়েছেন। যোগদানের দু'দিন পরই তাকে রুমে ডেকে নিয়ে গালাগালি করেছিলেন। বলেছেন, কায়েসের বিরুদ্ধে তিনি চাঁদাবাজির অভিযোগ পেয়েছেন। ডিউটিও ঠিকমতো করে না বলে জানতে পেরেছেন/।
কায়েস পত্রিকাটা হাতে করে নিয়ে দ্রুত ওসির রুমে যেতে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়। ৮০ কিলোমিটার বেগে যাওয়া কোন গাড়ির হঠাৎ ব্রেক করার মতো। কিছুক্সণ চিন্তা করেন। মেয়েটার কথা ওসি সাহেবের সামনে বললে হিতে আবার বিপরীত হবে না-তো। তিনি আবার বলে বসবেন নাতো, শুধু চাঁদাবাজি. ফাঁকিবাজিই করেন না , কোন রাস্তা দিয়ে কোন সুন্দরী যায় তার খবরও রাখেন।কিন্তু এ কথাতো তিনি নাও বলতে পারেন। হতে পারে উল্টোটাও। ওসি সাহেব ভাবতে পারেন, কায়েসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও সে থানা এলাকার খোঁজ-খবর ভালোই রাখেন।
শেষ চিন্তাটাই তার মনে ধরে। সে পত্রিতাটা হাতে নিয়েই দরজার একটি পাট্টা ধাক্কা দেয়। বিনযের সুরে বলে-
আসবো স্যার
ওসি সাহেব চশমা নামিয়ে একবার দেখেন তাকে। ধক করে ওঠে কায়েসের মন। এই প্রথম নরম সুরে ওসি সাহেব বললেন-
আসুন
এ সময় ওসির রুমে আর কেউ ছিল না। ওসিও একজন লোক খুঁজছিলেন ছবির মেয়ে প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য।
স্যার একটা বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলাম।
বলেন।
পত্রিকার ছবিটা দেখািয়ে বলে-
স্যার যে মেয়েটাকে ধরিয়ে দিতে বলছে সেই মেয়ে আমাদের থানা এলাকায় থাকে।
গর্বের ভঙ্গিতে বলে কায়েস। ওসির মুখে হাসি ফোটে।
তাই নাকি! আপনি সিওর?
জ্বি স্যার, সিও র।
ভেরিগুড। এই প্রথম দেখলাম যে আপনি আসলে কাজের লোক। আমি ছবিটা নিয়ে ভারছিলাম। ওর বাসা কি আপনি চেনেন?
না স্যার।
তা হলে সে এ থানা এলাকার সেটা জানেন কি করে?
স্যার আমি এ থানায় দুই বছর ধরে আছি। মেয়েটিকে থানার সামনে দিয়ে যেতে দেখেছি অনেকবার।
আর সুন্দরী মেয়ে বলে তার দিকে বেশি বেশি তাকিয়েছেন, তাইতো?
হাসে ওসি। লজ্জা পায় দারোগা। ওসি আশ্বস্থ করেন তােক।
এইটা দোষের কিছু না। মানুষ সুন্দরের পূজারী। আপনি তাকে দেখতেই পারেন। আমি হলেও বোধহয় দেখতাম। বোধহয় কি বলছি, দেখতামই। যাই হোক, আপনি এর বাড়ির ঠিকানাটা বের করার চেষ্টা করেন। দেখেন যদি আমরা তাকে ধরতে পারি তা হলে কিন্তু বেশ নাম হবে। মিডিয়া কাভারেজ ভালো পাবেন। দুইটা ডাকাত বা অস্ত্র যদি ধরেন তা হলে কি খবর ছাপা হয় পত্রিকায়? টিভিট চ্যানেল ছুটে আসে? আসে না। এই মেয়েকে ধরে ফেলতে পারলে ব্যাপক নাম হবে বুঝেলেন।
চলবে..