Main Logo
আপডেট : ১ এপ্রিল, ২০২৪ ১০:৫৮

ধারাবাহিক উপন্যাস- পর্ব-০৯

নিশিকথা

ওমর ফারুক

নিশিকথা

নাহিদ আহমেদের ইচ্ছা করছিল না বেলকনিতে যাওয়ার। সেখানে গেলেই কিছু অপদার্থ লোককে তার চোখে পড়ে। সকাল থেকেই তারা তার বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছে। এ কারণে নাহিদ আহমেদ বেলকনি থেকে শোবার রুমে গিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু বেলকনিটা যে তার খুব প্রিয়। সেখানে বসে পত্রিকা না পড়লে কি যেন একটা মিস করেন তিনি। মানুষের প্রেম শুধু মানুষের প্রতিই নয় কখনো কখনো জড় পদার্থের প্রতিও জন্মে। এ এক অদ্ভুত ব্যাপাার।
নাহিদ আহমেদ যে প্রাইভেটকারটি ব্যবহার করছেন তা ১৫ বছর আগে কেনা। এই দিনগুলােতে কত রকমের গাড়ির মডেল বদলেছে কিন্তু এই প্রাইেভটকারটি বদলানোর প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। বরং তার এই গাড়িটিকে এতো আপন মনে হয় যে, মাঝে মাঝে তার সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। এই গাড়িটি তাকে দেশের কত জায়গায় নিয়ে গেছে তার ইয়ত্তা নেই। নিজের চাকা কাদার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে নাহিদ আহমেদকে বাঁচিয়েছে। গরমের আচ যাতে না লাগে সে দিকেও নজর রেখেছে গাড়িটি। এসব কথা মনে হওয়ায় গাড়র প্রতি তার প্রেম বাড়তে থাকে। কত গাড়িইতো আছে রাস্তায় গিয় নষ্ট হয়ে যায়। মালিককে ঠেলতে পর্যন্ত বাধ্য করে। কোনো কোনো গাড়ি কথা না শুনে চলে যায় রাস্তার নিচে। হয়তো মালিককের প্রতি খুশি না থাকায় গাড়িরা এমন কাজ করে থাাকে। কিন্তু নাহিদ আহমেদের গাড়িটি ১৫ বছরে একদিনও এমন ঝামেলায় ফেলেনি তাকে। 
নাহিদ আহমেদ অবশেষে বেলকনিতে গিয়ে ইজি চেয়ারে বসলেন। পত্রিকাটা তার হাতেই ছিল। চেয়ারে বসেই দেখতে পান জড়ো হও য়া ক'জন মানুষ একে অপরকে আঙ্গুলের ইশারায় নাহিদ আহমেদকে দেখাচ্ছে। নাহিদ আহমেদর বুঝতে কষ্ট হয় না, তারা কি বলছে। তিনি কোনো দিকে ভ্রক্ষেপ না করে চেয়ারে বসে পত্রিকা পড়ায় মনোযোগ দেন। 
হঠাৎ নাহিদ আহেমদ তার কাঁধে একটি হাতের উপস্থিতি টের পান। নরম সেই হাত আজ বেশ শক্তই মনে হচ্ছে। নাহিদ আহমেদ পত্রিকা ভাঁজ করে ওপরের দিকে তাকান। অন্যদিনের মতোই একগাল হাসি দিয়ে নিশি বলে ওঠে-
‌আব্বু, পত্রিকায় আাজ মন খারাপ করার মতো কোন খবর নেই?
নাহিদ আহমেদ প্রায় প্রতিদিনই মেয়েকে সাবধান থাকার জন্য পত্রিকার নেতিবাচক খবরগুলো পড়ে শোনান। ছিনতাইকারী হাতে পথচারী খুন, এক মহিলার ভ্যানিটি ব্যাগ টান দিয়েছে ছিনতাইকারীরা। এক মেয়েক রাস্তা থেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এমন সব খবর নিশিকে শোনানো যেন নিত্যদিনের অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে নাহিদ আহমেদের। নিশির বুঝতে কষ্ট হয় না, নাহিদ আহমেদ কেন তাকে এই খবরগুলো পড়ে শোনান।
কিন্তু আজ তিনি কিছু বললেন না। বড় একটা নিশ্বাস নিলেন। ততক্ষণে জড়ো হওয়া লোকজনের মধে সোরগোল সৃষ্টি হয়েছে। নাহিদ আহমেদ বুঝতে পারছেন নিশিকে দেখেই তারা এমন করছে। কিন্তু নিশির চোখ ততক্ষনে নিচে যায়নি। সোরগোল শুনে সে নিচে তাকায়। দেখে সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলাবলি করছে। কোনো কিছু বুঝে উঠতে না পেরে বাবার কাছে জানতে চায়-
আব্বু আমাদের বাড়ির সামনে এতো মানুষ কেন?
মেয়ের প্রশ্নের কি উত্তর দেবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না নাহিদ আহমেদ। তার চোখ ছলছল করছে। বিষয়টি নজরে আসে নিশির। আৎকে ওঠে তার মন। বাবাকে সে কোনো দিন কাঁদতে দেখেনি। আজ এমন কি হলো যে তার চোখ বেয়ে আষাঢ়ের ঢল নামবে। কিছুক্ষণ বোকার মতো বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো সে। নাহিদ আহমেদও  তাই। দৃশ্যটা কোনো শিল্পীর চোখে পড়লে এমন কোনো ছবি হয়তো আঁকতে পারতেন যা লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসাকেও হয়তো হার মানাতো। 
কিছুক্ষণ পরই বাসার সামনে জড়ো হওয়া লোকজনের সংখ্যা বাড়তে দেখে নিশি। একজন চিৎকার করে আরেকজনকে বলতে থাকে- 
হ্যাঁ ওর নামই নিশি। বিশ্বাস না হয় ডাক দিয়ে দেখেন?
শ্রোতা হয়তো অনেক কষ্টে ডাক দেওয়া থেকে বিরত থাকে। কিন্তু কথাটি কানে আসে নিশির। এবার নিশি অনেকটাই নিশ্চিত, তাকে নিয়েই কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে। কিন্তু কি ঝামেলা? পরক্ষণেই মনে পড়ে মোবাইল ফােনের মিসড কললিস্টের কথা। সেই ঝামেলার কথা তার বাবাও  জানে। এ কারণেই তার চোখে পানি। নিশি কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। বাবাকে প্রশ্ন করে-
আব্বু আমাকে নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়েছে নাকি?
নাহিদ আহমেদ কোনো উত্তর দেন না। মেয়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। কি উত্তর দেবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। প্রথমে ভেবেছিলেন কোনভাবেই মেয়ের সামনে তিনি ভেঙ্গে পড়বেন না। নিশি উঠে বেলকনিতে আসার সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত দুটো ভাল সংবাদ পড়ে শোনাবেন। এর পেছনে একটা যুক্তিও  কাজ করে তার। অনেকদিন ধরেই তো তিনি মেয়েকে খারাপ খবর পড়ে শুনিয়েছেন, সাবধান করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কি হলো। বরং তার উল্টোটাই হয়েছে। তা হলে এখন থেকে তিনি উল্টো কাজটাই করবেন বলে মন স্থির করেন। কিন্তু নাহিদ আহমেদ তার দুঃখ -কষ্টের বিষয়টি লুকাতে পারলেন না। নিজের অজান্তেই চোেখ পানি এসে যায়। অনেক্ষণ পর মুখ খােলেন নাহিদ আহমেদ-
হ্যাঁ তোকে নিয়েই ঝামেলা হয়েছে। নে পত্রিকার তিন নম্বর পাতাটা উল্টিয়ে দেখ।
নাহিদ আহমেদর কাছ থেকে পত্রকা নিয়ে বেডরুমের দিকে চলে যায় নিশি। নাহিদ আহমেদের চোখ বেয়ে পানি নিচে গড়িয়ে পড়তে থাকে।

 

উপরে