Main Logo
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১০:১৭

ধারাবাহিক উপন্যাস- পর্ব- ১৩

নিশিকথা

ওমর ফারুক

নিশিকথা

গ্রাফিক্স ডিজাইনার ইমরান মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। কী একটা বাজে কাজ সে করে ফেলেছে। এর দায় এখন কে বহন করবে? এত দ্রুত কাজ করাটা তার ঠিক হয়নি। এতদিন তার কাজের প্রশংসা ছিল। টুথপেস্ট কোম্পানীর আর কোন কাজ সে পাবে না। শুধুতো তাই নয় যার ছবি ছাপা হয়েছে তাকেই বা কি উত্তর দেবে সে। পুরো ঘটনার জন্য সেইতো দায়ী। এসব ভেবে অস্থির হয়ে উঠেছে ইমরান। 

সকালে সে অফিসে গিয়েছিল। পত্রিকাটা হাতে নিয়ে বিজ্ঞাপনটা দেখেই ভীত হয়ে পড়ে। আর কোন চিন্তা করতে না পেরে অফিসে তালা লাগিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে। দুটো মোবাইল ফোনের সুইচ অফ করে রেখেছে সে। যে কারণে ছবি নিয়ে কি হচ্ছে, সে ব্যাপারে সে কিছু জানতে পারেনি। তবে তোলপাড় যে হয়ে যাচ্ছে , তা বুঝতে পারে। তার চোখের সামনে টুথপেস্ট কোম্পানীর সিইও মুখটা ভেসে উঠে। লোকটা বজ্জাতের হাড্ডি। হাসি হাসি মুখে শক্ত শক্ত কথা বলে। ইমরানের কাছে তােক চামার টাইপের লোক মনে হয়। তবে মার্কেটিং ম্যানেজার আশফাক সাহেব নরম প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু আশফাক সাহেবতো তাকে রক্ষা করতে পারবে না। এ মুহূর্তে আশফাকের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মাচ্ছে ইমরানের। তিনি একজন বড় অফিসার। তিনি এতো নরম টাইপের হবেন কেন? তার হাক ডাকে ভয় পাবে অন্য কর্মকর্তারা। সিইও তাকে কোন খারাপ মন্তব্য করতে সাহস পাবে না।
মানুষের এই এক স্বভাব। নরম টাইপের মানুষকে অন্যরা খুব পছন্দ করে। কিন্তু যখনই নিজে বিপদে পড়ে, তখন চিন্তা করে তার উপর একজন শক্ত টাইপের লোক থাকলে সহজে রক্ষা পাওয়া যেতো। মাঝে মাঝে ইমরান নিজেকে শক্ত হিসেবে জাহির করতে চেষ্টা করে। কিন্তু কারো সঙ্গে মেজাজ দেখানোর পর নিজে নিজে পুড়তে থাকে। ফলে সে সাধারন ভাবেই থাকতে চায়।
এমনিতে খুব একটা চা পানের অভ্যাস নেই ইমরানের। মালিবাগ এলাকায় একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে সাবলেট থাকে সে। তার ফ্ল্যাটের সব কক্ষে যাওয়ার অনুমতি আছে। ফ্ল্যাটের মালিক বুড়াে-বুড়ি। তারা ইমরানকে সন্তানের মতোই স্নেহ করে। তাদের কাজের বুয়া ইমরানের জন্য রান্না করে দিয়ে যায়।
আজ ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারা কোথায় যেন বেড়াতে গেছে। ইমরান তার নিজের কক্ষে বসে ভাবছে কি করে সময় কাটাবে। সে বারে বারে পত্রিকার তিন নম্বর পাতায় চোখ বুলিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছে। মনে মনে ভাবে চা বানিয়ে খেলে একটু অন্য কাজে রাখা যেতাে মস্তিস্ককে। 
চায়ের কেটলী চুলায় চাপতেই বেজে ওঠে কলিংবেল। ইমরান খুশি হয়। নিশ্বয়ই চাচা-চাচি চলে এসেছে। মনে মনে লজ্জাও পায়। চাচা-চাচি এসে যখন দেখবে ইমরান চা বানাচ্ছে তখন হাসিতে ফেটে পড়বে। তখন ইমরান কি করবে সে প্রস্তুতি নিতে থাকে। সে দরজা খুলে চমকে যায়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মার্কেটিং ম্যানেজার আশফাক।
এই বাসার ঠিকানা কেউ জানে না। কিন্তু আশফাক সাহেব কোত্থেকে জানলেন, সে চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠে সে। বেশ কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে থাকে ইমরান। আশফাকের কথায় নিরবতা ভাঙ্গে। 
কি বিশ্বাস করতে পারছেন না?
না মানে ইয়ে...আমতা আমতা করতে থাকে ইমরান। 
আপনি এই বাসায় সাবলেট থাকেন। এখন বাসায় কেউ নেই। তাই না?
আরো চমকে যায় সে। এতসব আশফাক সাহেব জানলেন কি করে! তিনি কি তা হলে পত্রিকায় ভুল করে যে তরুণীর ছবি ছাপা হয়েছে, তার সম্পর্কেও খােঁজ খবর নিয়ে এসেছেন। কিছুই মেলাতে পারে না সে। হাত জোর করে বলে-
সরি, আই অ্যাম রিয়েলি সরি। আমার একটা ভুলের জন্য আপনার নিশ্চয়ই খুব সমস্যা হয়েছে।

চলবে...

উপরে