Main Logo
আপডেট : ৩ মে, ২০২৪ ১১:৪৬

ধারাবাহিক উপন্যাস- পর্ব- ১৭

নিশিকথা

ওমর ফারুক


নিশিকথা

ইমরান নিশির কাছে কিভাবে ক্ষমা চাইবে তার চিন্তা করতে থাকে। নিশির সঙ্গে তার অনেকদিন দেখা নেই। কিন্তু নিশির ছবির সঙ্গে তার প্রতিনিয়ত দেখা হয়। তার ক'টি ছবি সে তুলেছিল। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর বন্ধুরা মিলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়েছিল। আর তখনই ইমরানের ক্যামেরায় নিশি ধরা পড়ে। 
ঢাকায় ফিরে ছবিগুলো যখন কম্পিউটারে দেখে তখন  ইমরান বুঝতে পারে নিশির চেহারা আসলে খুবই ফটোজেনিক। তার হেয়ার স্টাইল, মেকআপ সবই পারফেক্ট। ইমরানের স্পষ্ট মনে আছে, নিশি হোটেল থেকে ম্যাডামের সঙ্গে বেরিয়ে যখন বাসে উঠতে যাচ্ছিল তখন সবার চোখ ছিল নিশির দিকে। সেদিন খুব বেশি  বাতাস বইছিল না। তবুও উড়ছিল নিশির চুল। লম্বা চুল গুলোেত যেন তখন সমুদ্রের ঢেউ।
ইমরান কলেজে ভর্তি হওয়ার পর নিশিকে ওভাবে দেখতে পায়নি। নবীনবরণ অনুষ্ঠানের দিন নিশিকে চোখে পড়ে তার। সেই যে চোখে পড়া এরপর একদিন না দেখলে যেন কি একটা অপূর্ণ থেকে যায় তার কাছে। কত ছুঁতোয় সে নিশির সঙ্গে কথা বলতে যেতাে তার হিসাব নেই। নিশি কখনোই রাগ করতো না। তবে বুঝতে পারতো কেন ইমরান তার সঙ্গে কথা বলতে আসতো বারবার। ইমরান তখনও বুঝতো না কেন বারবার নিশির সঙ্গে কথা বলতে তার এতো ভালাে লাগে। তার মনে নিশির জন্য একটা ভালোলাগা তৈরি হয়েছিল সে তা অনুমান করতে পারে। কিন্তু গম্ভীর প্রকৃতির নিশির সামনে গিয়ে তার ভালোলাগার কথা বলার মতো সাহস শুধু তার কেন, কলেজের ছাত্র নেতাদেরও নেই।
তাছাড়া বড় ভাইদের অনেককেরই চোখ পরে থাকতো নিশির ওপর। যে কারণে নিশির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ইমরানের একটা ভয় কাজ করতো। 
একদিন প্রচণ্ড বৃষ্টিতে কলেজে আটকে গিয়েছিল নিশি। বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তখন  নিশিদেড়র বাড়ির কাছেই ছিনতাইকারীদের বেশ উৎপাত ছিল। এ কারণে সন্ধ্যার আগেই নিশি বাসায় ফিরে যেতাে। সঙ্গত কারণেই ইমরানের সহযোগিতা চেয়েছিল সে। তার সঙ্গে বাসা পর্যন্ত তাকে পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করলে একটুও দেরী না করে রাজি হয় ইমরান। 
রিক্সায় পাশপাশি নিশির সঙ্গে বসার সুযোগ পাবে. সে তা চিন্তার মধ্যেই আনেনি। খুব খুশি হয় ইমরান। নিশি সেটা বুঝতে পারে। এ নিয়ে কোন ধরনের মন্তব্যও করেনি নিশি। ইমরান যতটা পারে নিশির গায়ে যেন গা না লাগে সেরকম চেষ্টা করে। তরুন রিক্সাচালক খুব দ্রুত গতিতে রিক্সা চালাচ্ছিল। একটি স্পিড ব্রেকার পার হওয়ার সময় রিক্সা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খায়। আর তখন এক হয়ে যায় ইমরান ও নিশির কাঁধ। সজোরে ধাক্কা খায় তারা। নিশির কাঁধের নরম অংশের ছোঁয়ায় মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে ইমরান। নিশিকে খুব আপন করে পেতে ইচ্ছে করে তার। শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে। ঠিক ওই সময় নিশি তাকিয়েছিল তার দিকে। ভয় পেয়েছিল ইমরান। নিজের অজান্তেই ‌সরি' বেরিয়ে আসে তার মুখ থেকে। নিশি বিস্মিত হয়।
সরি বলার মানে কি?
ইমরান তার মনের ইচ্ছে গোপন করে বলে, না তোমার গায়ে আমার গা লেগে গিয়েছিল তো তাই।
ইমরানের কথা শুনে হাসে নিশি। সেই হাসিতে কোনো কৃত্রিমতা ছিল না। এরপরও ভয় পেয়েছিল ইমরান। লাল হয়ে গিয়েছিল তার মুখ। 
নিশি বলে, ইমরান তুমি একটু বোকা টাইপের। সেটা কি তুমি জানো?
ইমরান বিস্মিত হয়ে বলে, না তো।
এবার আরো জোরে হাসে নিশি। এরই মধ্যে রিক্সাটি নিশিদের বাসার সামনে এসে পড়ে। নিশিকে নামিয়ে দিয়ে একই রিক্সায় চলে যায় ইমরান।
ওইদিন তাদের দু'জনকে এক রিক্সায় দেখেছে অনেক বন্ধু। ফলে নিশির সঙ্গে ইমরানের প্রেম হয়েছে সেটি বেশ চাওড় হয়। ঈর্ষায় জ্বলে যাচ্ছিল ইমরানের ক'জন সহপাঠি। 
ইমরান নিশির ব্যাপারটি এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করে। 
সব শুনে সেই বড় ভাই তাকে বলে, আসলে মেয়েটি তোমার প্রেমে পড়েছে। 
সেদিন থেকেই ইমরান নিশিকে ভালবাসে। কিন্তু নিশি তাকে ভালোবাসে কি না তা বুঝতে পারে না। 
কলেজ পাশ করার পর ইমরান ও নিশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু নিশি পরীক্ষায় পাশ করলেও ইমরান পারেনি। পরে সে একটি কলেজে ভর্তি হয়। পাশাপাশি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। বেশ কিছুদিন কাজ করে সে গ্রাফিক্স ডিজাইনে দক্ষ হয়ে যায়। বিভিন্ন কোম্পানীর কাজ শুরু করে সে।
নিশির সঙ্গে শেষ কবে, কোথায় দেখা হয়েছিল তাও তার মনে নেই। তবে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হতো। রাত ১২ টার পর ইমরান তাকে ফোন করলেও বিরক্ত হতো না নিশি। বরং খুশিই হতো। ওই সময়টুকু নিজেকে পড়াশোনার বাইরে একটু ফ্রেস করে নেওয়ার জন্য নিজের মনটাকে বাইরে নেওয়ার সুযোগ পেতাে নিশি। তাদের মধ্যে ইমরানের কাজ নিশির পড়াশােনা এসব নিয়েই কথা হতো।
নিশির অবস্থা জানতে ইমরান মোবাইল হাতে নেয়। তার হাত কাঁপছে। কিভাবে বলবে যে, তার সামান্য ভুলের জন্য এত বড় একটা কাণ্ড ঘটে গেছে। এরপরওতো বলতে হবে। সে যে অপরাধী। সে ক্ষমা চাইবে নাকি হেসে বিষয়টাকে হালকা করবে, ভেবে পায় না। বন্ধুর কাছে কি ক্ষমা চাওয়া যায়। কেন চাওয়া যাবে না। এতেতো প্রেস্টিজ যাওয়ার কথা নয়। বরং মহত্ব বাড়ার কথা। কি করবে ইমরান বুঝে উঠতে পারে না। শেষে সিদ্ধান্ত নেয়, সে প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নেবে। প্রয়োজনে পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলবে সে। 
ইমরান মোবাইলে সেভ করা নম্বর থেকে নিশির নম্বরটা বের করে। সেন্ড বাটনে চাপ দেওয়ার পরপরই তার হাত আরো বেশি কাঁপতে থাকে। অনেক্ষন ফোনটি বাজলো। কিন্তু কোন উত্তর মিললো না। মোবাইলের মনিটরে ভেসে উঠলাে নো আনসার। ইমরান ধারনা করলো নিশি মোবাইলের কাছে নেই। তা না হলে অবশ্যই তার ফোনটি ধরতো। মোবাইল কেনার পর যতবার নিশিকে ফোন করেছে প্রতিবারই ফোন ধরেছে সে। তা হলে আজ ধরবে না কেন? নিশ্চয়ই সে মোবাইল থেকে দূরে কোথাও আছে। আবারো ফোন করে ইমরান। এবারও একই ফল। ইমরানের তর সইছে না। একের পর এক ফোন করেই যাচ্ছে। কিন্তু নো আনসার। ৫০ বারের মতো ফোন করে সে বিরক্ত হয়। বুঝতে পারে নিশি ইচ্ছে করেই তার ফোন ধরছে না। ঠিক তখনই তার বুকে কেমন একটা কষ্ট চেপে বসে। কাঁদতেও ইচে্ছ করে। 
ইমরান কখনো বিছানায় যায়, কখনো রুম তালাবদ্ধ করে বাইরে হাঁটতে যায়। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না সে। একবার ভাবে রমনা পার্কে চলে গেলে হয়তো কিছুটা ভালো লাগবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে যখন প্রেমিক প্রেমিকার জুটি দেখবে তখন হয়তো তার মনে নিশির ছবিটা আরো বেশি করে ভাসবে। ফল হবে উল্টো। তা হলে কোথায় যাওয়া যায়। সে ওউ টুথপেষ্ট কোম্পনীতে যাওয়ার জন্যই মনস্থির করে। 

 

চলবে..

উপরে