Main Logo
আপডেট : ৭ মে, ২০২৪ ০৯:৫০

ধারাবাহিক উপন্যাস- পর্ব- ১৯

নিশিকথা

ওমর ফারুক

নিশিকথা

টুথপেস্ট কোম্পানীর সিইও মার্কেটিং ম্যানেজার আশফাককে তার কক্ষে ডাকলেন। নিশির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলেন। তাকেই বানানো হবে ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর। যত টাকা চায় তত টাকাই তাকে দেয়া হবে। সিইও নিশ্চিত এই মেয়েকে নিয়ে বিজ্ঞাপন বানানোর পর টিভিতে প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের নজর কাড়বে। সিইওর সঙ্গে একমত মার্কেটিং ম্যানেজার আশফাকও। তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে সিইওকে আশ্বস্থ করা হয়েছ। 

সিইও কমান্ডিং স্টাইলে মার্কেটিং ম্যানেজারকে বলেন-
এই মেয়ে আমাদের টুথপেস্ট কোম্পানীর ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর। ব্যাস।
বেশ বিপাকেই পড়েছেন মার্কেটিং ম্যানেজার। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন-
স্যার মেয়েটির সঙ্গে এখনো আমাদের কথা বলা সম্ভব হয়নি। স্যার ইমরানের মুখ থেকে শুনলাম মেয়েটির বাবা একজন পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। মা একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। স্যার, সেতো রাজি নাও হতে পারে।
মেয়ের চেহারাতো বলে দেয় সে সম্ভান্ত পরিবারের সন্তান। এর খোঁজ নিয়ে সেটা বুঝতে হবে কেন? আমি এ কারণেইতো বলছি, এই মেয়েই হবে আমাদের টুথপেস্ট কোম্পানীর ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর।
স্যার তবুও আরেকবার চিন্তা করে দেখলে হয় না? আশফাক সাহেবের গলায় কাকুতির সুর। এবার ধমকে ওঠেন সিইও।
আপনি জানেন না আমি এক কথার মানুষ। এক কথা দু'বার বলা পছন্দ করি না। আশফাক সাহেব মাথা নিচু করলেন। তিনি জানেন, এখন আর কোনো কথা বলা যাবে না। তাহলে তার চাকিরটাই হয়তো নিরাপদ থাকবে না। কথায় কথায় চাকরি খাওয়ার অভ্যাস আছে সিইওর। ১ বছর এ প্রতিষ্ঠানে এ পর্যন্ত ২০ জনের বেশি কর্মকর্তা- কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। তাদের অপরাধ শুধু সিইওর কথা যথাযথ ভাবে পালন করতে পারেননি।
আশফাক সাহেবের দুটি ছেলে। দুটো ছেলেকেই তিনি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াচ্ছেন। অনেক খরচ। তার স্ত্রী এক সময় চাকরি করলেও এখন বেকার। এ মুহূর্তে টুথপেস্ট কোম্পানীর চাকরি চলে গেলে মহা বেকায়দায় পড়তে হবে তাকে। বাসায়ও গোলমাল শুরু হয়ে যাবে। আগের কোম্পানী থেকে আশফাক সাহেব ছাঁটাই হয়েছেন। এরপর মাস দুয়েক বেকার ছিলেন। ওই সময় তিনি বুঝতে পরেছিলেন স্ত্রীর ভালবাসা আসলে চাকরির জন্যই বেশি। সুতরাং বিজ্ঞাপনের মডেলের কারণে তিনি চাকরি হারাতে রাজি নন। সিইও যা বলেছেন, সেই মত কাজ করাই ভালো। কিন্তু নিশিকে কিভাবে বিজ্ঞাপনের মডেল বানাবেন সে চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লেন। একদিকে সিইওর কঠিন মুখ, অন্যদিকে একটা চ্যালেঞ্জ। দুই চিন্তায় তিনি এসি রুমে রুমের মাঝেও ঘামতে শুরু করলেন। ক্রমশই তার ঘাম পিঠের দিকের শার্ট ভিজিয়ে দিচ্ছে। কপালের ঘাম এরই মধ্যে সিইওর চোখে পড়েছে। তিনি বিরক্ত নিয়ে টিসু্ পেপারের বাক্স এগিয়ে দিয়ে বলেছিলেন-
নেন ঘাম মোছেন।
এ সময় তার শরীর দিয়ে আরো বেশি ঘাম বেরুতে শুরু করে। বেজায় অস্বস্থিতে পড়ে গেলেন তিনি। এর মধ্যেই দরজা ঠেলে পিয়ন রইস আসে ভেতরে। মাথা নিচু করে সিইওর সামনে দাঁড়িয়ে জানায়, একজন তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। সিইও ভেতরে পাঠানোর অনুমতি দেয়। 
দরজা ঠেলে যুবক ভেতরে ঢুকতেই আশফাক সাহেবের চক্ষু চড়ক গাছ। ইমরান তার কাছে না গিয়ে সিইওর কাছে এসেছে কেন? সিইওর সঙ্গেতো তার পরিচয়ই নেই। 
ইমরান নিজে থেকেই পরিচয় দেয়। বিজ্ঞাপনের ছিব বদলে যাওয়ার কথাও খুলে বলে। ইমরানের স্মার্টনেস দেখে খুশি হন সিইও। 
এরপর দীর্ঘক্ষণ ধরে সিইওর কথা হয় ইমরানের সঙ্গে। সিইওর হাসিখুশি ভাব দেখে আশফাক সাহেবের ঘামও শুকাতে থাকে। এবার ঝামেলাটা বোধ হয় তার মাথার উপরন থেকে ইমরানের উপরই পরবে। তিনি মনে মনে খুশি। আশফাক সাহেবের মনে হয় যে ভুল হয়েছে, এরপর তাকে মডেল বানানাের অফার নিয়ে গেলে মার খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি পুলিশেও দিতে পারে।
নিশিকে ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর বানানোর কথা ইমরানকে জানায় সিইও। ইমরান খুশি হয়। তবে আশঙ্কা কাজ করে। সে নিশির মোবইলে অন্তত ৫০ বার ফোন করেছে। একবারও নিিশি তার ফোন রিসিভ করেনি। এমনিক মিসড কল দেখে অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও একটি কল পর্যন্ত করেনি। তাহলে বোধ হয় সে বুঝে গেছে এই কাজ তার হাত দিয়েই হয়েছে। সে নিশ্চয়ই জানে তার কাছে এই ছবিটি রয়েছে। যদি ধরতে না পারতো তা হলে নিশ্চয়ই তার মোবাইল ফােনটি ধরতো। আর যদি তেমন সমস্যাই হতো তা হলেতো তার মোবাইল ফোন খোলা থাকার কথা নয়। অনেক কিছু মনের মাঝে ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে ইমরানের।
আশফাক ও ইমরানকে চিন্তিত দেখে সিইও নিজেও চিন্তায় পড়ে গেলেন। তাহলে কি তার আশা পুরণ হবে না। নিশিকে তিনি ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর বানাতে পারবেন না। যেখানে দেশের জনপ্রিয় চিত্র নায়িকা মডেলরা একবার বললে লাফিয়ে পড়তো সেখানে অখ্যাত একটি মেয়েকে বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে পাওয়া যাবে না? জেদ ধরলেন সিইও, যেভাবেই হোক নিশিকে মডেল বানাতেই হবে। এটা তার একটা চ্যালেঞ্জ। 
সেদিন তার চ্যালেঞ্জের কথা ইমরান ও আশফাককে জানিয়েও ছিলেন সিইও। ইমরান তাকে শতভাগ সহযােগিতা করার আশ্বাস দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল সিইওর কক্ষ থেকে।

চলবে..

উপরে