Main Logo
আপডেট : ১২ মে, ২০২৪ ১০:৫১

ধারাবাহিক উপন্যাস- পর্ব- ২৪

নিশিকথা

ওমর ফারুক


নিশিকথা

দিবার তখন থেকেই টার্গেট বিদেশ চলে যাবে। সে শুনেছে লন্ডনে বাংলাদেশী মেয়েরা শপিংমলে সেলস গার্লের কাজ করে ভালো রোজগারই করে। সেখানে ওটা সম্মানজনক পেশা। সে সেখানে পিএইচডি করতে যাবে। পড়াশোনার পাশাপাশি শপিংমলে কাজ করে খরচ জুটিয়ে নেবে। আর এ কারণেই দেশে সে শপিংমলে কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু তার মনের ইচ্ছেটা কখনোই প্রকাশ করেনি কারও কাছে। কিন্তু লন্ডন গিয়ে পিএইচডি শেষ করে তাকে আর শপিং মলে কাজ করতে হয়নি। একটি স্কুলে তার চাকরি জোটে। ইংরেজদের স্কুল। সেখানে দক্ষতার সঙ্গেই শিক্ষকতা করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।
দিবা যেদিন লন্ডনে চলে যাবে, ঠিক একদিন আগে ফোন করে জানিয়েছিল জবাকে। জবা সেদিন আশ্চর্য না হয়ে পাড়েনি। এত কিছু হয়ে গেল, সে কিছুই জানতে পারলো না। তা হলে কি তার সঙ্গে দিবার যে ঘনিষ্ঠতা সেটি মেকি ছিল, এমন প্রশ্নও তার মনে খেলা করে যায়।
লন্ডন যাওয়ার পর দিবা কোনো যোগাযোগ করেনি দিবার সঙ্গে। বছর দু'য়েক পর জবাকে একবার মাত্র ফোন করেছিল। আর সে সময় জবা দিবাকে জানায় তার একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। নাম রেখেছে নিশি। সে এখন গর্বিত মা। দিবা সেদিন খুব বেশি কথা বাড়ায়নি। 
নিশির সঙ্গে জবা তার সমস্ত বন্ধু-বান্ধবীর গল্প করেছে। কিন্তু কোনদিন দিবার কথা উচ্চারণও করেনি। তার একটা বান্ধবী লন্ডনে আছে তার ভুলে যাওয়ার কথা নয়। জবা দিবার আচরণে কষ্ট পেয়েছিল। এও মনে করেছিলেন, দিবা বন্ধু হওয়ার যোগ্য নয়। অযোগ্য কোনো বন্ধুর কথা মেয়েকে না জানানোই সব সময় ভালো মনে করেছেন জবা। যে কারণেই নিশিকে দিবা ফোন করলেও চিনতে পারেনি। 
জবা দরজার সামনে দিবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে অনেক্ষণ ধরে। দিবার চোখ দুটোকে কেমন যেন মনে হচ্ছে তার কাছে। দিবার এমন চোখ কোনোদিন চোখে পড়েনি জবার। আজ এমন দেখাচ্ছে কেন। চোখের মনির পাশে লালচে দাগ স্পষ্ট চোখে পড়ে। 
দিবা জবাকে দেখে প্রথমে চিনতে পারেনি। জবা এতো মোটা হয়ে গেছে তা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে দিবার। মনে মনে ভাবে, দেশের মানুষগুলো ভেজাল খেয়ে খেয়ে গায়ে চর্বিই জমিয়ে যাচ্ছে শুধু। অর্থনীতিতে কোনো চর্বি হচ্ছে না। দিন দিন শুকিয়েই যাচ্ছে।
দিবা তুই?
মুখ খোলেন জবা আহমেদ। কথার মাঝে কেমন কৃত্রিমতা খুঁজে পেলেন দিবা। এই প্রথম তার এমন মনে হলো।
হ্যাঁ আমি। ভালাে আছিস?
প্রশ্নটার কোনো উত্তর তার কাছে এ মুহূর্তে নেই। নিজের মনকেই জিজ্ঞেস করেন, আসলে তিনি ভালো  আছেন কি না। কোন উত্তর খুঁজে পান না। এত বছর পর খারাপ আছি শুনলে বান্ধবী হয়তো কষ্ট পেতে পারে। জবা বলেন-
হ্যাঁ, ভালো আছি। আয় ভেতরে আয়।
জবা দিবাকে ভেতরের রুমে নিয়ে মেইন দরজা আটকে দেয়। লাগেজ হাতে নিয়ে দরজার ওপাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন দিবা। আশ-পাশে তাকিয়ে দিবা বলেন-
আমার নিশি কোথায়?
কথাটা শুনে বিস্মিত জবা। নিশেকে খুঁজতেই পারে। কিন্তু আমার নিশি কোথায়। এটা কেমন কথা বললো দিবা। খটকা লাগে জবার কাছে। এ ছাড়া নিশির কথা জানিয়েছে ২০ বছর আগে। এরপর তার সঙ্গে জবার যোগাযোগ নেই। তা হলে কিভাবে সে নিশির নামটি মনে রেখেছে। জবার সব কিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। মেয়ের ছবি পত্রিকায় দেখে যতটা অবাক না হয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি অবাক হলেন দিবার মুখে এ কথা শুনে।
নিশি তোর মেয়ে মানে!
তোর মেয়ে কি আমার মেযে না?
জবার বুকের উপর থেকে যেন বড় একটা পাথর সরে গেল। 
ওহ।
বলে তাকে ভেতরের রুমে নিয়ে যায়। কলিং বেলের শব্দ শুনেই নিশি দরজা খুলতে গিয়েছিল। জবাকে আসতে দেখে সে সরে যায়। আড়ালে দাঁড়িয়ে দু'বান্ধবীর কথাও শোনে সে। নিশি নিশ্চত হয়, গত রাতে এই মহিলাই তাকে ফােন করেছিল। আজ তাদের বাসায় এসেছে। লন্ডন থেকে ঢাকায়! কেন? কি কারণে।কে তিনি? বিভিন্ন প্রশ্ন খেলা করে নিশির মনে।

চলবে.. 

উপরে