ধারাবাহিক উপন্যাস- পর্ব- ২৮
নিশিকথা
ওমর ফারুক
সব জানার পর জবা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তবে মনে মনে যে তিনি খুশি হয়েছিলেন তা বুঝতে পেরেছিলেন সবাই। তা না হলে জবা দিবাকে তিরস্কার না করে এমনভাবে জড়িয়ে ধরবে কেন। জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিয়েছিলেন। দিবাও চোখের পানিতে ভাসছিলেন। যেন এক মহামিলন নাহিদ, তারিক ও নিশির সামনে।
নিশির কষ্ট অনেক কমে যায়। আর কিছু না হোক গত দু'দিনে যে কষ্ট তাকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে তা থেকে তো মুক্তি পাওয়া গেল। নিশ্চিত হওয়া গেল রাস্তার মেয়ে সে নয়। তার প্রকৃত বাবার কোলেই মাথা রেখেছে সে। মা না হলেও জবা তাকে যেভাবে আদর স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছে তাতে প্রকৃত মাও হয়তো তেমনটা করতো না। তবে নাহিদ লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী কোন দিন তারিক ছাড়া আর কারোর এ ঘটনা জানার কথা নয়। জবাতো নয়-ই। এরপরও এই পরিস্থিতিতে কী-ই বা করতে পারতেন নাহিদ। মনে মনে ভাবলেন বিষয়টা খোলাসা হওয়ায় কষ্টের চেয়ে আনন্দটাই তো বেশি। জবা শুধু বলেছিল, আমি কষ্ট পাচ্ছি না। ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।
সবার মুখেই কেমন একটা খুশি খুশি ভাব। জবা দিবাকে একবার বলেও দিয়েছে নাহিদের দিকে যেন দৃষ্টি না দেয়। সে যেন সমস্ত কিছু ভুলে যায়। দিবা হাসিমুখেই মেনে নেয়। দিবা ভাবতেও পারেনি সত্যিই কোনোদিন সবার সামনে নিশির মা হিসেবে নিজেকে হাজির করতে পারবে।
সন্ধ্যার দিকে দিবার মনে পড়ে নিশির বিপদের কথা জেনেই তিনি এতদূর থেকে এসেছেন। কেন তার মেয়েকে ধরিয়ে দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো তা নিয়ে নিজেই কথা ওঠালেন। দিবার কথা শুনে বিষয়টি সবার মাথায় আসে। দিবা আসার পর তারা সবাই পত্রিকার বিজ্ঞাপনের কথা ভুলেই গিয়েছিলেন। বিষয়টি মাথায় আসায় নিশি জোর দিয়ে বলে, সে এমন কিছুই করেনি যে তাকে ধরিয়ে দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেয়া হবে পত্রিকায়। কিন্তু নিশি বুঝে উঠতে পারে না এমন কেন হলো। এই ছবিটিই বা পত্রিকা অফিসে গেল কি করে? সে এমন পোজে ছবি তুলেছে কখনো তাও মনে করতে পারছে না। তার কাছে এই ছবির কোনো কপিও নেই। তা হলে বিষয়টি কিভাবে ঘটলো। সব শুনে দিবা পরামর্শ দেয় পত্রিকা অফিসে গিয়ে প্রথমে জানতে হবে। এর পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।
নাহিদ ও তারিক রেডি হয় পত্রিকা অফিসে যাওয়ার জন্য। সঙ্গে নিশিও যেতে চায়। কিন্তু তারা তাকে সঙ্গে নিতে চান না। দুই বন্ধু বাসা থেকে বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে একটি দামি গাড়ি এসে থামে নিশিদের বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে নেমে তিনজন আসেন নিশিদের বাসায়। তাদের একজনের হাতে ফুলের তোড়া।
কলিং বেলের শব্দ পেয়ে নাহিদ দরজা খুলে দেন। টুথপেস্ট কোম্পানীর সিইও নিজের পরিচয় দেন। নাহিদ তাদের নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসান। তারিকের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় জাবা, দিবা ও নিশি পাশের রুমে কথা বলছিল। জবা ও দিবা স্মৃতি রোমন্থন করছিল। কিন্তু ড্রয়িং রুমে সিইওর কাছ থেকে নিশির পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপার বিষয়টি জেনে হতভম্ব না হয়ে পারেননি। নিশিকে টুথপেস্ট কোম্পানীর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করতে চায় শুনে নাহিদ চমকে যায়। তিনি কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেননি, তার মেয়ে সারা দেশে মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করবে। টিভি ও পত্রিকায় তার মেয়ের ছবি প্রচার হবে।
সব শুনে পাশের রুমে যান নাহিদ আহমেদ। তারিক চুপ হয়ে বসে আছেন সোফার এক কোণায়। নাহিদ গিয়ে সবাইকে বিষয়টি জানান। সবাইকে ড্রয়িং রুমে আসতে বলেন।
জবা, দিবা ও নিশি এক সঙ্গে যান ড্রয়িং রুমে। ঢুকেই নিশির চোখে পড়ে ইমরান। চমকে যায় সে। ইমরান এখানে কেন? তা হলে পুরো ঘটনার সঙ্গে ইমরান জড়িত! নিশির কাছে ইমরান হাত জোর করে ক্ষমা চায়। সে জানায়, তার এই ছবিটা কক্সবাজার থেকে ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা হয়েছিল। যা নিশি বুঝতে পারেনি।
ইমরানের কথা শুনে রাগ হয় নিশির। তাকে কিছুটা ভালো লাগতো তার। এ মুহূর্তে নিশির সমস্ত ভালোলাগা উবে গেছে। ইচ্ছে করছে কষে একটি থাপ্পর লাগাতে। নিশিকে আরেক দফা সিই্ও ঘটনাটি খুলে বললেন। জানালেন, নিশিকেই তার টুথপেস্ট কোম্পানীর ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর করার জন্য তিনি নিজেই এসেছেন। কাতর সুরে বলেন, তাকে যেন ফিরিয়ে না দেন নিশি। নিশি ফিরিয়ে দেবে কী! সে তো এমন একটা সুযোগ পাবে জীবনে ভাবতেও পারেনি। তার চেয়ে ঢের সুন্দরী রাজধানী ঢাকার অলিতে গলিতে দেখা যায়। নিশি সম্মতি দেয়। আর সেদিন থেকেই বদলে যেতে থাকে নিশির জীবন।
চলবে..