Main Logo
আপডেট : ১ এপ্রিল, ২০২৪ ২০:৩৫

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশ সফর এবং পররাষ্ট্র নীতিতে গতিসঞ্চার

সেবীকা রানী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশ সফর এবং পররাষ্ট্র নীতিতে গতিসঞ্চার

প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা চতুর্থবার  প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিগত নির্বাচন নিয়ে নানা শংকা ইত্যাদি থাকলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে তা শেষ হয়েছে। এটা এককভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তার সরকারের কৃতিত্ব। এখন দেশের উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখার পালা। এই উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য বিশে^র বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সহায়তা প্রয়োজন। আর সে প্রয়োজন পূরণে দরকার পররাষ্ট্রনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসার আর এ সংক্রান্ত কাজে গতিসঞ্চারের। সে কাজটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার করে যাচ্ছেন।   
এই সময়ে তিনি দেশের সকল খাত বিশেষ করে যোগাযোগ, আইসিটি, স্বাস্থ্যসহ ইত্যাদি খাতে বাপক উন্নয়ন করেছেন। বয়স্কভাতা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা, সুদূর গ্রামীণ জনপদের মানুষের সুস্বাস্থ্য ও সুচিকিৎসার জন্য কমিউনিটি চিকিৎসাকেন্দ্রে স্থাপনসহ যে অজস্র জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন তা ইতোমধ্যে দেশের মানুষের দৃষ্টিতে এসেছে এবং তারা এর সুফল পেতে শুরু করেছে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তিনি পদ্মসেতু, কর্ণফুলী টানেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার গ্রামীণ জনপদ মহেশখালী-মাতারবাড়িকে কেন্দ্র করে ৩৪টি প্রকল্পসহ বহু প্রকল্প সম্পন্ন করেছেন, কোন কোনটির কাজ চলছে। মাতারবাড়িতে  গড়ে উঠছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, কোল জেটি, এলএনজি টার্মিনালসহ বাণিজ্যিক বন্দর। এ বাদেও অনেক বড় বড় মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে সরকার। 
বিশ্বে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। করোনাকাল অতিক্রমের পর এই যুদ্ধ ও আরো কিছু দুর্যোগের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। ২০২৬ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে সংযুক্তির ঘোষণা আসছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার ভেতরও বাংলাদেশে কোন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেমে নেই। বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো উন্নয়নের রোলমডেল দেশ হিসেবে চিহ্নিত করতে শুরু করেছে।
পররাষ্ট্রনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা আর এ সংক্রান্ত কাজে গতিসঞ্চারের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মানী সফর করেন। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিতে দেশটিতে গিয়েছিলেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই ছিল শেখ হাসিনার প্রথম সরকারি বিদেশ সফর। ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি মিউনিখে যান। জার্মানিতে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন; পাশাপাশি বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আলথানি ও ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মিতে ফ্রেডিরিকসেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং জার্মানির ফেডারেল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী সভেনজা শুলজেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী মিউনিখের বার্গারহাউস গার্চিং হোটেলে জার্মানি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনায়ও যোগ দেন। মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে মূলত রাষ্ট্র/সরকারপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, সরকারি এবং বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এটি সমকালীন ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্চ-পর্যায়ের নিয়মিত আলোচনার একটি শীর্ষস্থানীয় ফোরাম হিসেবে বিবেচিত। এ বছরের ফোরামে ৩৫ জনেরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশগ্রহণ করেছেন। বড় শক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং আঞ্চলিক সংঘাত, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, নিউক্লিয়ার নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু নিরাপত্তা, তথ্য নিরাপত্তা, পানি নিরাপত্তা, অভিবাসন, সাপ্লাই চেইন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মহামারি ইত্যাদি বিষয়ে এবারের ফোরামে আলোচনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফিন্যান্স’ সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। তিনি প্যানেলের উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এ সময় ফিলিস্তিনের গাজা ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহ, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র মানুষের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের অমানবিক হত্যার কবল থেকে মুক্ত করে সব প্রকার যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার জোর আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। আর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও বহুদূর পর্যন্ত অনুভূত হয়, এ বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন নীতি ও অংশীদারিত্ব বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আক্সেল ফন ট্রটসেনবার্গ। বর্তমান অর্থবছরে বাজেট সহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংক থেকে অঙ্গীকার করা ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দ্রুত ছাড়ের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি জোরপূর্বক স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের সাহায্যে এবং এই সমস্যার বিরূপ প্রভাবে আক্রান্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে দেওয়া ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়ন সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের উচ্চ-মধ্যম আয় ও উচ্চ-আয়ের দেশের পর্যায়ে উত্তীর্ণ হবার কাঙ্ক্ষিত পথে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে এই কর্মকর্তা আশ্বস্ত করেন। 
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। বৈঠককালে দুই দেশের বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুই নেতা। গম, ভোজ্যতেল ও অন্যান্য কৃষিপণ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের দ্রুত সমাধানের কার্যকর উপায় অন্বেষণের অনুরোধ করেন জেলেনস্কিকে। এ ছাড়াও গাজা উপত্যকায় সংঘাতের বিষয়ে মতবিনিময় করেন তারা। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে বলেন, মিউনিখে ফলপ্রসূ এই সফরের ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শান্তি, সার্বভৌমত্ব ও সর্বাঙ্গীণ নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকার বলিষ্ঠরূপে প্রতিফলিত হয়েছে। দেশের আকার নয়, বরং নীতির শক্তিতেই যে মানবতার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক মুক্তি, এবারের সম্মেলনে আমি এই বার্তাই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছি। 
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর করেন। এ সফরটি জরুরি ছিল বলে মনে করেন দেশের কুটনৈতিক মহল। গত বছর  ১৭ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসিতে সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেন তিনি। দ্বিপক্ষীয় নানা বৈঠকের পাশাপাশি অংশ নেন উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংবর্ধনায়ও যোগ দেন শেখ হাসিনা। এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে তারাও বেশ গুরুত্বের সাথে নেয়। যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় তিনি সে দেশের প্রেসিডেন্ট, অন্যান্য মন্ত্রী ও সচিবদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং দেশে তাঁর দ্বারা সম্পাদিত যাবতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের বিষয়টি তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলোকে প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর ভুয়ষী প্রশংসা করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে মত বিনিময় করেন।  আর নির্বাচনের পর মার্কিন সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে এ কথারই জানান দিয়েছেন যে তারা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় শরিক থাকতে চায়। 

লেখক :সেবীকা রানী দপ্তর সম্পাদক বিএফইউজে

উপরে