আপডেট : ২৯ জানুয়ারী, ২০২৪ ১০:৩৬
আজকের ছড়া/কবিতা
রঙ্গরস
মো.রফিকুল ইসলাম সুফিয়ান
[সর্ব বিষয়ে বিশেষ অজ্ঞ ড.জ্ঞানাধারের একটি সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার গ্রহণে ড.হাঁদারাম প। বিষয় : নজরুলের গান।]
সাক্ষাৎকার পর্ব--২
ড. হাঁদারাম প: স্যার,আসতে পারি?
ড.জ্ঞানাধার: কেন নয়!
আসুন আসুন
ভাবতে পারেন এটাই আপনার বাড়ি।
ড.হাঁদারাম প: অসংখ্য ধন্যবাদ, স্যার,
বিরক্ত করতে আসি বারবার।
ড.জ্ঞানাধার : কতো দিন পর এলেন,
ভাবলাম, বিদেশে কোথাও গেলেন।
আবারো কি কিছু আছে জানার
কিংবা মানার?
ড.হাঁদারাম প: স্যার,আছে মানে!আলবৎ আছে,
নিবেদন করছি আপনার কাছে।
আজকের বিষয়টা নজরুলের গান।
ড.জ্ঞানাধার: আ-হা-হা! আ-হা-হা!
ভরে গেলো প্রাণ!
ড.হাঁদারাম প : স্যার,
তাঁর একটি গানের কলি
একটু বলি...
"মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী
দেব খোঁপায় তারার ফুল,
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির
চৈতী চাঁদের দুল।"
প্রিয়াকে সাজাতে 'তারার ফুল',
'চাঁদের দুল',
অদ্ভুত যেন পুরো ব্যাপারটাই,
এ বিষয়ে একটু জানতে চাই।
ড.জ্ঞানাধার: ব্যাপারটা ধরেছেন খাসা,
কী যে তার জবাব দেই
খুঁজে না পাই ভাষা!
আসলে মেয়েরা তো কিছুটা
সরল এবং বোকা,
এ সুযোগেই নজরুল
প্রিয়াকে দিয়েছেন পুরোটাই ধোকা।
গানের বাণী আর কাব্যরসে,
প্রিয়াকে আনতে চান বশে।
একটি পয়সাও করতে চান না ব্যয়,
এ যে বড়ো অন্যায়!
ড.হাঁদারাম প: স্যার,মারহাবা মারহাবা,
ব্যাখ্যাটা অসাধারণ!
ভরে গ্যালো মন।
স্যার, এবার দেখুন
ভাবনা এ কোন!
"কণ্ঠে তোমার পরাবো বালিকা,
হংস সারির দোলানো মালিকা,
বিজলী জরীণ ফিতায় বাঁধিব
মেঘ রং এলোচুল।"
স্যার, কণ্ঠে--
'হংস সারির দোলানো মালিকা' কিংবা
'বিজলী জরীণ ফিতা'
একটু যদি ব্যাখ্যা করেন
বুঝি না সব কী তা!
ড.জ্ঞানাধার : বিষয়টা খুব সরল
এক্কেবারে পানির মতো তরল।
'কণ্ঠে' 'হংস সারির' 'মালিকা' মানে--
হাঁসের সারির মালা গেঁথে
আনন্দে মেতে,
পরাবেন প্রিয়ার গলায়
নানান ছলাকলায়।
সাজাবেন রানির মতো,
আহা! আনন্দ যে কতো!
তবে এখানে হাঁস কিনতে কবির
বেড়ে যাবে খরচা,
শূন্য রবে না হিসেবের পরচা।
অন্যদিকে বিজলি দিয়ে ফিতা হবে,
রংটা হবে জরির,
প্রিয়ার চুলে বেঁধে দেবেন
রূপটা হবে পরির।
ড.হাঁদারাম প:স্যার,ব্যাখ্যা শুনে
হচ্ছি অবাক
চিত্ত আমার হচ্ছে সবাক--
বিজলি দিয়ে না হয় ফিতা হলো,
রঙিন, ঝলোমলো!
কিন্তু মালা হাঁসের,
এ যে ভীষণ ভয়ের এবং ত্রাসের।
হাঁসের মালা পরে হবেন রানি,
মাথায় আমার ধরছে না তা
ক্যামনে যে তা মানি!
ড.জ্ঞানাধার : ভাবিনি তো এমনতরো
বলে গেলেন যেমনতরো!
হাঁসের মালা? কী যে ভয়ানক!
শুনেই য্যানো বুক করে ধকধক।
বিষয়টা ঠিক কবির এবং প্রিয়ার,
শোনেন তবে ডিয়ার--
আরো কিছু থাকলে জানার বলুন,
তা না হলে শেষ করি আজ চলুন।
ড.হাঁদারাম প: স্যার কী যে বলেন,শেষ?
এখনো, তো কাটেনি কথার রেশ।
এরপরই কবি বলেন--
"জোছুনার সাথে চন্দন দিয়ে
মাখাব তোমার গায়,
রামধনু হতে লাল রং ছানি
আলতা পরাব পায়।"
স্যার, এখানে আমার পর্যবেক্ষণ,
বলছি বিলক্ষণ --
বিনে পয়সার জোছনা নিয়ে
তার সাথে চন্দন দিয়ে,
মেখে দেবেন প্রিয়ার সারা অঙ্গে,
শত রঙ্গে।
তেমনি আবার রংধনু
হতে লাল রং নেবেন,
আলতা করে পরিয়ে দেবেন
প্রিয়ার দুটি পায়,
নিখাঁদ নিখরচায়।
স্যার,ভাবছি আমি এখানে
নজরুল,
করেছেন খানিকটা ভুল--
ড.জ্ঞানাধার: ভুল?এ যে দারুণ
ব্যাপার!
বলুন দেখি, কী ভুল আছে খ্যাপার?
ড.হাঁদারাম: বিনে পয়সায় জোছনা এবং
রংধনু রং লাল,
এমনতরো ভাবনাতে তাঁর
হাওয়ায় ভাসে পাল,
কিন্তু দু'চারপয়সা হলেও চন্দন তাঁর
করতে হবে ক্রয়,
বিষয়টা ঠিক হয়তো কবি
ভাবেননি নিশ্চয়।
ড.জ্ঞানাধার: আপনিও তো গবেষণায়
মোটেই দেখি কম না,
নামটা হাঁদারাম হলেও
বোকা যে একদম না।
ড.হাঁদারাম প: স্যার,ক্যান যে লজ্জা দেন!
আরো দুটো ধন্যবাদ নেন।
গানে আছে না--
"নামের বড়াই করো না কো
নাম দিয়ে কী হয়,
নামের মাঝে পাবে না কো
সবার পরিচয়।"
ড.জ্ঞানাধার : বলেছেন যা খাঁটি,
একদম ফাটাফাটি।
ড.হাঁদারাম প: স্যার,এসে গেছি শেষ প্রান্তে
একটু শুধু চাই জানতে;
গানের শেষে আছে--
"আমার গানের সাত-সুর দিয়া
তোমার বাসর রচিব ও প্রিয়া
তোমারে ঘিরিয়া গাহিবে আমার
কবিতার বুলবুল।"
স্যার,এখানে বাসর সাজাতে
গানের 'সাত সুর' আর
'কবিতার বুলবুল',
কেমন য্যানো বাঁধাচ্ছে গণ্ডগোল।
ড.জ্ঞানাধার : এ আর তেমন কী হাঁদারাম,
প্রিয়াকে ফাঁকি দেয়াই কবির কাম।
ম বাসর-রাতে দেনমোহর না দিয়ে
প্রিয়াকে ভুলাতে,
আনন্দে দুলাতে
সাত সুরে গান আর
কবিতা রচনা করে,
আনন্দে দিতে চান ভরে।
ড.হাঁদারাম প : স্যার,আমার কিন্তু
সন্দেহটা জাগে--
প্রিয়া কি সেসব মেনে নিতেন
গভীর অনুরাগে?
ড.জ্ঞানাধার : বাসর ঘরে নাই বা গেলাম,
ভাবুন সেটা কবি,
রাগ-অনুরাগ সবই।
কিউরিসিটি থাকলে সেসব
জানবো না হয় পরে,
এবার চলুন ঘরে।
ড.হাঁদারাম প: স্যার,জানলাম অনেক
আসবো আবার অশেষ ধন্যবাদ।
ড.জ্ঞানাধার: ধন্যবাদ আপনাকেও
কেউ যাবে না বাদ।
ড.হাঁদারাম : বন্ধুরা সব,ভালো থাকুন,
আবার হবে দেখা,
ধন্য হবো লাগলে ভালো
ক্ষুদ্র আমার লেখা।