আপডেট : ২৮ মার্চ, ২০২৪ ১৪:৪৫
আমাদের মাধবীলতা গাছটি
ফরাজী মোহাম্মদ রফিক
বড় কষ্টে আছে আমাদের প্রিয় মাধবীলতা গাছটি
যতবার তাকাই ততবারই মনে হয় ,
নিঃসঙ্গ মায়াবী মলিন আঁখিতে অশ্রু ঝরছে ৷
সেই কবে গেটের পূর্ব পার্শ্বে প্রতিবেশীদের সাথে
বেড়ে ওঠেছিল উদ্যোমী শক্তিতে ;
আকাশ ছোঁবে বলে ,সকল বাধা মাড়িয়ে
পুরানো দেয়ালে ভর করে ,বারান্দার গ্রিল বেয়ে
বহু বছর আগে পৌঁছেছে চৌতলা ছাদে ৷
পিছনে ফিরে মাধবী কত কথা ভাবে -
প্রিয় সঙ্গী নারিকেল গাছ জুটি,
ছিল অজস্র বছরের সখ্যতা , ছিল সখা- সখী ,
বিলীন হয়েছে তরঙ্গ তারের তেজস্বী প্রভাবে ;
দিনক্ষণ ভুলেছে , ডায়ারিহীন মাধবীর জীবনে ৷
প্রায় দু'যুগের পল্লবিত পল্লবাধারে
শত শত চড়াইয়ের বাসর হয়েছে
নিজ পত্র - পল্লবের ছায়া তলে ৷
গত ছ'মাস আগেও ডালে ডালে
শতাধিক চড়াইয়ের সন্ধ্যাকালীন সভা ,
রাত্রি যাপন ছিল প্রতিদিন ৷
অজানা কোন হিংস্র প্রাণীর থাবায়
প্রতিরাতে নিরীহ চড়াই জীবন হারায় ,
প্রতিবাদে চড়াই , ত্যাগ করেছে মায়াময় নিবাস ৷
শূন্য ডাল পালায় আজ শুধু হাহাকার ,
সন্ধ্যাবেলায় কান পেতে শুনি
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে নিঃস্ব মাধবী ,
নিঃসঙ্গ পার করে দীর্ঘ রজনী ৷
আজ মাধবীর সারা শরীরে
ধূলিকণা এঁটে দিয়েছে শক্ত প্রলেপ ,
কেড়ে নিয়েছে সবুজ , আজন্ম চির চেনারূপ ৷
পাশে চলা রাস্তায় দানবী গাড়ীর ;
বিকট ঝাঁকুনি , দাপুটে শব্দে ,
প্রতিনিয়ত চমকে উঠে প্রিয় মাধবীর বুক ৷
বিনম্র মাধবী প্রশ্ন করে মাধবীকে
এ কোন সভ্যতায় সে দাঁড়িয়ে আছে !
আমরা যারা,ভাবছ তোমার অতি প্রিয়জন
কারণে বা অকারণে কষ্ট দিতে
পিছ পা কী হয়েছি তেমন ?
তোমার উঠানের সবটুকু ভূমি ,
ভূমি দস্যুর ন্যায় কেড়ে নিয়েছি
ইট সিমেন্টের প্রলেপে ঢেকে দিয়েছি ৷
স্বার্থপরের মতো , চলাচল নিরাপদ রাখতে
তোমার শাখা-প্রশাখা বহুবার কেঁটেছি ,
তুমি কেঁদেছ , আমরা কী বুঝেছি ?
তারপরও , শতঘাত প্রতিঘাত মাড়িয়ে
অভিযোজন করে হাসে প্রিয় মুখটি
আগামী বসন্তে ফুলবান রূপে মাতাবে প্রকৃতি ,
তার প্রিয় আবাস , আমাদের পুরানো আঙ্গিনা ৷