Main Logo
আপডেট : ৪ জুলাই, ২০২৪ ১১:৪৬

দুই রমণী

ফরাজী মোহাম্মদ রফিক

দুই রমণী
কথা হয়েছিল ঋতুপতির পড়ন্ত দুপুরে
পাতাকুড়ুনি গ্রাম্য সরলা দুই রমণীর সাথে ,
অঘোর বাবুদের ফেলে যাওয়া ভিটাতে ।
ক্লান্ত দেহে ম্লান চোখে
শত জলধর বাসা বেঁধেছে 
যেন ঝরঝর বৃষ্টি এখনই ঝরবে ।
ক্লেশ দেহ জীর্ণ শরীর লম্বাটে গড়ন , ফজিলা বেগম ,
স্বামী গত হয়েছে কন্যা রেখে একজন  ।
বহুদিন কেটেছে খেয়ে ,না খেয়ে
অতপর একদিন আঁচলে ঢেকে মুখ 
হেঁটেছে দীর্ঘ মেঠো পথ 
পাড়ি দিয়েছে ব্রহ্মপুত্র
মাড়িয়েছে জয়নুল উদ্যান ,
সেদিন পাশে ছিলো এই সহযোদ্ধা  ,জহুরা বুবু।
মৃত প্রাণে  দিয়েছিলো বাঁচার প্রেরণা 
ছোট সাহেবের বাড়িতে করেছিলো কর্মের সংস্হান ,
দুরুদুরু বুকে ভয়ে সেদিন খেলেছিলো ঊর্মিমালা 
জীবন পেয়েছিলো  নতুন যুদ্ধক্ষেত্র , নতুন পথচলা ।
 
দিলখোলা নিঃসন্তান দরদী জহুরার
কপাট খোলা গৃহে ,অপলক দৃষ্টিতে পথ চেয়ে থাকে, 
পক্ষাঘাতে আক্রান্ত শয্যাশায়ী স্বামী ।
শেষ বিকালে ক্লান্ত দেহ যখন পা ফেলে উঠানে
অস্পষ্ট কণ্ঠে স্বামী বলে উঠে , কে গো ? জহুরা !
নিমিষেই জহুরার পৃথিবী পুর্ণতা পায়
স্বামী ছাড়া এ ধরাধামে তার আর কেউ নাই ।
জীবন নিয়ে জহুরার এটুকু আবেগ ছাড়া আর কিছু নাই ,
বিধাতার বিধানে লেখা যা, মেনে নিয়েছে সবটাই ।
 
কথোপকথনে আবেগে আমরা কিছুটা আপ্লুত যখন
দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরাতে সংগ্রামী ফজিলা বলে তখন ,
সেদিন থেকেই বুবুর সাথে আসা যাওয়া পারাপার ,
কখনও দ্বিধা কখনও বাধা , কখনও থেমে নিয়েছি  হাঁপ  ,
ক্ষুধার তাড়নায় আবারও হেঁটেছি , হাঁটছি অবিরাম ।
বিষণ্ন মুখে সূর্যপানে চেয়ে দীর্ঘশ্বাসে ফজিলা কয়
আর কথা নয় , অনাহারে রয়েছে মেয়েটা আমার ;
বুবু বস্তা তোল  মাথায়
বেলা ঐ যে পশ্চিমে যায় ।
 
যাপিত জীবনের নিত্য এ চিত্র
ফুরাবে কি কোনোদিন ? 
আয়েশী জীবনের কোনো মোহ
মুখ ফসকে বেরুতে শুনিনি সেদিন ,
দুঃখ কষ্টের সাথে গলাগলি করে
ইচ্ছা  অনিচ্ছাকে গায়ে না মেখে 
জহুরা ফজিলারা প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকে ।
উপরে