ন্যাশনাল রোমিং যুগে বাংলাদেশ : টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী
ন্যাশনাল রোমিং যুগে প্রবেশের মধ্যমে ডিজিটাল সংযুক্তি সম্প্রসারণে আরও একটি মাইলফলক স্থাপন করলো বাংলাদেশ। বাংলালিংক এবং টেলিটক বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় রোমিং ফিল্ড ট্রায়াল চালু করা হয়। এই ব্যবস্থায় বাংলালিংক ও টেলিটক গ্রাহকরা কোনো স্থানে তাদের ব্যবহৃত নেটওয়ার্ক দুর্বল বা অনুপস্থিত হলে সেখানে অন্য অপারেটরের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন। এর মাধ্যমে তারা দেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবার সুযোগ পাবেন। আপাতত এই ব্যবস্থার সীমিত পর্যায়ের ফিল্ড ট্রায়াল উদ্বোধন করা হলো আজ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় রোমিং ফিল্ড ট্রায়ালের উদ্বোধন করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, বাংলালিংক এর সিইও এরিক অস এবং টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: হাবিবুর রহমান বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার জাতীয় রোমিং ফিল্ড ট্রায়ালের উদ্বোধনকে ডিজিটাল সংযুক্তির ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় জীবনে ডিজিটাল সংযুক্তির সম্প্রসারণে আরও একটি নতুন মাইলফলক স্থাপন করলো বাংলাদেশ। তিনি বলেন, এমন একটি দিনের জন্য সুদীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা ছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশে কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই ডিজিটাল সংযুক্তিতে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল সংযুক্তি শ্বাস প্রশ্বাসের মতো অপরিহার্য হয়ে ওঠেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নেতৃত্বে বিটিআরসির নিরলস প্রচেষ্টায় গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় একদেশ এক রেট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রবর্তন, দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ এলাকায় ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড সুবিধা পৌঁছে দেওয়াসহ গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা ২০২১ সালে ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করেছি, মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ হতো না ডিজিটাল সংযুক্তি গড়ে তুলতে না পারলে। স্মার্ট কানেক্টিভিটির সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। টেলিটক ও বাংলালিংকের মধ্যে রোমিং চালুর বিষয়টি দেশের ডিজিটাল সংযুক্তির বিকাশে আরও একটি মাইলফলক বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। ডিজিটাল প্রযুক্তি বিপ্লবের এই অগ্রদূত বলেন, বাংলালিংক ও টেলিটকের মধ্যে এই কৌশলগত অংশীদারিত্ব দেশব্যাপী টেলিটক ও বাংলালিংক গ্রাহকদের মোবাইল সংযোগের পরিসর বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অপারেটর দুইটির মধ্যে অবকাঠামো শেয়ারিংয়ে ভূমিকা রাখবে। ফিল্ড ট্রায়াল শেষ হওয়ার পরে সেবাটি বাণিজ্যিকভাবে চালু করা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এর ফলে গ্রাহকরা দেশব্যাপী বিস্তৃত নেটওয়ার্ক কাভারেজের মাধ্যমে ভয়েস, এসএমএস ও ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন। এই উদ্যোগ দেশে শক্তি সংরক্ষণ ও পরিবেশ-বান্ধব অবকাঠামো নির্মাণকেও উৎসাহিত করবে। আমি টেলিটক এবং বাংলালিংক-এর মধ্যে এই পার্টনারশিপ দেখে আনন্দিত। আমি বিশ্বাস করি, এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের টেলিকম অপারেটরদের মধ্যে অবকাঠামো শেয়ারিংয়ের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। এটি উভয় অপারেটরের জন্যই ইতিবাচক, কারণ এর মাধ্যমে তারা একে অপরের অবকাঠামো ব্যবহার করতে পারবে। বিশেষ করে এর মাধ্যমে টেলিটক সারা দেশে বাংলালিংক-এর ১৫,০০০-এরও বেশি সাইট ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক কাভারেজ সম্প্রসারণ করার সুযোগ পাবে। অপরদিকে বাংলালিংকও টেলিটকের প্রায় ৬ হাজার টাওয়ারসমূহ ব্যবহার করে লাভবান হবে। এটি স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি অনুসরণীয় উদ্ভাবনী পদক্ষেপ বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, প্রযুক্তিতে শতশত বছরের পশ্চাদপদতা অতিক্রম করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্বে ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে উপনীত হয়েছে। ভারত, থাইল্যান্ড, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন, নেদারল্যান্ড, ইতালি ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ পৃথিবীর ২২টি দেশে ন্যাশনাল রোমিং চালু রয়েছে। এটি গ্রাহক এবং অপারেটরের জন্য অত্যন্ত লাভজনক একটি পদ্ধতি বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব অধিকতর স্বচ্ছ ও গ্রাহক বান্ধব হিসেবে ন্যাশনাল রোমিং ব্যবস্থার জন্য ন্যাশনাল রোমিং পলিসি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ২২ টি দেশের বিদ্যমান ন্যাশনাল রোমিং পলিসি পর্যালোচনার আলোকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি পলিসি প্রণয়ন করতে আমরা কাজ করবো। তিনি এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর প্রচেষ্টায় ন্যাশনাাল রোমিং চালুর বিষয়টি একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন। ন্যাশনাল রোমিংয়ের বিষয়ে জনসচেতনতার প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এটিকে কার্যকরভাবে এগিয়ে নিয়ে গ্রাহকবান্ধব সেবায় রূপান্তরে বিটিআরসির নিরলসভাবে কাজ করে যাবে বলে উল্লেখ করেন। তিনিও এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর অগ্রণী ভূমিকার প্রশংসা করেন।
বাংলালিংক-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) এরিক অস বলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের আগে ন্যাশনাল রোমিং চালু হওয়ায় যুদ্ধের ভয়াবহতার সময় তা গ্রাহকদের নেটওয়ার্ক সচল রাখার ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন বাংলাদেশে এই ধরনের প্রথম উদ্যোগ সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে আমাদের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে। বাণিজ্যিকভাবে চালু হলে এটি উভয় অপারেটরের গ্রাহকদেরকে দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন ও উচ্চ মানের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অভিজ্ঞতা দেবে।
টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, এই ফিল্ড ট্রায়ালের সফল বাস্তবায়ন শুধু আমাদের সেবাগুলিকে উন্নত করবে না, বরং ভবিষ্যতে বিভিন্ন খাতের মধ্যে অংশীদারিত্ব ও নানা ধরনের সুযোগের পথ প্রশস্ত করবে।
বঙ্গবন্ধুর বাণী সম্বলিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন : এর আগে মন্ত্রী বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির উদ্যোগে কোম্পানির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ সম্পাদিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বাণী সম্বলিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন। এই উপলক্ষ্যে জাতীয় সংসদের এলডি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড শিরীন শারমিন চৌধুরী চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নূরুল হুদা প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানী কর্তৃক এমন একটি পুস্তিকা প্রকাশের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।