শিগগরই অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের বিধিমালা জারি - ভূমিমন্ত্রী
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩-এর বিধিমালা প্রণয়নের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। ভূমিমন্ত্রী এইসময় আশা প্রকাশ করেন যে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের বিধিমালা শিগগিরই জারি করা সম্ভব হবে।
আজ সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে অবস্থিত গণমাধ্যম কেন্দ্রে সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত স্মার্ট ভূমিসেবা বিষয়ক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব-এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাইজেশন, নলেজ ম্যানেজমেন্ট ও পারফরমেন্স (ডিকেএমপি) অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মো: জাহিদ হোসেন পনির, বিপিএএ। কর্মশালায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণও উপস্থিত ছিলেন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও আন্তরিক সদিচ্ছার কারণে জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন দ্রুত পাস করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, বেশ কিছু স্মার্ট ভূমিসেবা শুরু করার মাধ্যমে স্মার্ট যুগে প্রবেশ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্যতম অগ্রদূত হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়কে আবির্ভূত হয়েছে।
ভূমিমন্ত্রী জানান, জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও অধিগ্রহণকৃত জমির প্রকৃত মালিকদের ভোগান্তি কমাতে আইবাসের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, ক্যাশলেস স্মার্ট নামজারি ব্যবস্থায় প্রতিমাসে ৪ লক্ষাধিক নামজারি মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ক্যাশলেস স্মার্ট ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থায় প্রতিদিন এ-চালানে সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে ৫ কোটি টাকা।
আইন ও বিচার বিভাগের আওতাভুক্ত নিবন্ধন কার্যক্রম শতভাগ ডিজিটাইজেশনের আওতায় চলে আসলে নাগরিকগণ আরও নির্বিঘ্নে ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন ভূমিমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, দলিলমূলে স্বয়ংক্রিয় নামজারি চালুর জন্য ইতোমধ্যে ১৭টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
ভূমিমন্ত্রী হিসেবে এখন তাঁর মেয়াদের প্রায় শেষ সময় অতিবাহিত হচ্ছে উল্লেখ করে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পর আমি সময়কে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে চেষ্টা করেছি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের পুরো টিম নিয়ে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে চেষ্টা করেছি। আমার উদ্দেশ্য ছিল দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে কাজ করে দেশের নাগরিকদের যথাযথ ভূমিসেবা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, এখনও আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে, তবে তা কাজ শেষ করার সঠিক পথে রয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
এর আগে কর্মশালার আলোচক ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিকেএমপির যুগ্মসচিব ড. মো: জাহিদ হোসেন কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীবৃন্দকে স্মার্ট ভূমিসেবা বিষয়ে সরকারি পরিকল্পনার বিস্তারিত অবহিত করেন।
কর্মশালায় যেসব তথ্য উঠে আসে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ভূমি উন্নয়ন করের ৪ কোটি হোল্ডিং ডাটা ইতোমধ্যে ডিজিটাইজ করা হয়েছে, ৬ কোটি ৪০ লক্ষ খতিয়ান অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে, দেশ-বিদেশে ডাক বিভাগের মাধ্যমে ৫ লক্ষ খতিয়ান নাগরিককে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, ১৬১২২ হটলাইনের মাধ্যমে এযাবৎ প্রায় ১২ লক্ষ কল নিষ্পত্তি করা হয়েছে, প্রায় ৫ হাজার সেবাগ্রহীতা প্রতিদিন ১৬১২২ নম্বরের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করছেন, ভূমিসেবা বিষয়ক অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৫ লক্ষ, ভূমি সংক্রান্ত আইনি পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে ১ লক্ষ নাগরিককে, সেবা ফিডব্যাক গ্রহণের জন্য প্রতিমাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট কল করছে ৬ লক্ষ নাগরিককে।
উল্লেখ্য, ২০২৬ সাল নাগাদ আরও যেসব গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক ভূমি সেবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: সেবার মধ্যে ল্যান্ড সার্ভিস গেটওয়ের (এলএসজি) মাধ্যমে নাগরিকের প্রোফাইল তৈরি করা এবং খতিয়ান ও ম্যাপ অটো কারেকশনের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ২০২৬ সাল নাগাদ সরকারি/পাবলিক ভূমি ব্যবস্থাপনা অধিকতর দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে লীজ ও সেটেলমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে সায়রাত মহাল ব্যবস্থাপনা সিস্টেম স্থাপন, রাজস্ব মামলা ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম গ্রহণ। এছাড়া, ভূমি ডাটা ব্যাংক থেকে স্বয়ংক্রিয় তথ্যের মাধ্যমে ভূমি কর্মকর্তাদের সরকারি স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন রহিতকরণকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।