সরকার রাষ্ট্রশক্তি নিয়ে টিকে থাকতে চায়: রিজভী
দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষকে সরকার কথা বলতেও বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আজকে গুম-খুন-মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা তাদের কথা বলতে পারে না। এক ভয়ংকর গুমের সরকার, ক্রসফায়ারের সরকার, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সরকার রাষ্ট্রশক্তি নিয়ে এমনভাবে টিকে থাকতে চায় যাতে সরকারের অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ যেন টু-শব্দও না করতে পারে। এজন্য তারা বিস্তার করেছেন এক ব্যাপক নেটওয়ার্ক।
রিজভী বলেন, আসুন সাহস-আশা ও দৃঢ় সংকল্পের মনোভাব নিয়ে আমরা চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিজয়ের পথে ধাবিত করি। অগণতান্ত্রিক আওয়ামী নাৎসিদের অন্তঃসারশূন্য অপপ্রচারের মায়াজাল বেদ করে স্বাধীনতা ও উদার মনোভাবের গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের উদ্যোম অব্যাহত থাকবে।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, কারাগারে বর্তমানে যে আইজি প্রিজন আছেন, তিনি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সব বন্দিদের সাধারণ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখতে মৌখিকভাবে সব কারাগারে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি এর আগে কয়েকবার বলেছি, আইজি প্রিজন এমন ধরনের মানুষ যিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিজের অবস্থান আরো দৃঢ় করার জন্য তিনি শপথ নিয়েছেন যে, কারাগারের ভেতরেও বিএনপির নেতাকর্মীদের তিনি জুলুম করবেন, নির্যাতন করবেন এবং বন্দিদের যে সাধারণ মানুষ হিসেবে তাদের যে মানবাধিকার সেটিকে চরমভাবে লঙ্ঘন করবেন। আজকে তিনি সারাদেশের কারাগারগুলোতে আরেকটি হিটলারের গ্যাস চেম্বার বানিয়েছেন, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প করেছেন আজকে কারাগারগুলোতে নাৎসিদের মতোই সে অবস্থা রয়েছে। সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিপীড়ন-নির্যাতনে আজকে বিপর্যস্ত অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, এমনকি কারাগারের ভেতরের সেলগুলোর বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আত্মীয়স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ ও কাপড়-চোপড় দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, এমনকি মোবাইলে কথা বলা একেবারে সীমিত করা হয়েছে, মানে দিতেই চায় না। নিয়ম হয়েছে যে, সপ্তাহে একদিন মোবাইলে আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে পারবে আর ১৫ দিনে দেখা-সাক্ষাৎ, আগে যা ছিল প্রতি সপ্তাহে।
তিনি বলেন, কারাগারগুলোতে এখন আর সত্যিকার সামাজিক অপরাধীরা থাকবে না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছে এ কারাগারগুলো পরিপূর্ণ করবেন বিএনপির নেতাকর্মীদের দিয়ে। তাই নিপীড়নের সব পদ্ধতি তিনি আশ্বস্ত করেছেন ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিদের কাছ থেকে। কারাগারগুলোতে তিনি (শেখ হাসিনা) বেছে বেছে সে ধরনের অফিসারদের নিয়োগ দিয়েছেন যারা শেখ হাসিনার ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। শেখ হাসিনা যা চান অর্থাৎ বিএনপির নেতাকর্মীরা নিপীড়িত হোক, নির্যাতিত হোক, অত্যাচারিত হোক, ওরা বাইরে যেমন নির্যাতত হয়, ওরা ধরা পড়ার পরে রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে মর্মান্তিক ও ভয়ংকরভাবে নিপীড়ন করা হয়। এখন কারাগারের ভেতরেও ভয়ংকরভাবে নিপীড়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকছে।
এ নিপীড়ন নজিরবিহীন। এ নিপীড়ন ভাষায় বলা যাবে না। অতি উৎসাহী অফিসাররা একপ্রকার দলীয় বন্দিদের ওপর যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
আমি বন্দীদের ওপর এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং পাশাপাশি বন্দিদের ন্যায্য অধিকার দেওয়ার জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, সরকারি তিতুমীর কলেজ হল শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ হোসেন ডিবি পুলিশের নির্যাতনে অসুস্থ অবস্থায় কারাগারের ভেতরে হাঁটাচলা ও খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে না। ডিবি পুলিশের নির্যাতনে কারণে পায়ের হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারছেনা, মাথায় আঘাত করার কারণে মাথায় প্রচণ্ডরকম ব্যথা অনুভব করছে এবং নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
কারাকর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না। আমি এ ধরনের অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং যতদ্রুত সম্ভব অসুস্থ ছাত্রদল নেতা নিয়াজ হোসেনের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জোর আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় নিয়াজ হোসেনের কিছু হলে সরকারকেই এর দায় বহন করতে হবে।
রিজভী আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার এবং ৫টি মামলায় আরও ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।