দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ: ব্রাসেলসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ইইউয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ জ্ঞান, দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং কর্মসংস্থানের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ভবিষ্যতে বিস্তৃততর অংশীদারিত্বের লক্ষ্যে কাজ করছে।
সরকারি সফরে ইউরোপে অবস্থানরত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের ঐতিহ্যবাহী 'সের্কেল রয়্যাল গেলুয়া সেন্টারে' স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৪ উপলক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি বন্ধুদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানে বেলজিয়াম সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপাক্ষিক বিষয়াবলী মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত জেরোএন কুরম্যান ((Jeroen Cooreman), ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল এ্যাকশন সার্ভিসের এশীয় প্রশান্ত অঞ্চল ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিকলাস কাভার্নস্টর্ম (Niclas Kvarnström) সম্মানিত অতিথি হিসেবে এবং বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে দেশের মিশন প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ বক্তব্য দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সকলকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, গত দেড় দশকে অর্জিত টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে এশিয়া এবং এর বাইরেও দ্রুততম বর্ধনশীল একটি অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে।
বেলজিয়ামকে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করে ড. হাছান তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় বেলজিয়ামে উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য এসে দেশটির সমাজ, সংস্কৃতি এবং মানুষের সঙ্গে কাটিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
তিনি ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর ব্রাসেলস সফরের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন এবং আগামী দিনে বেলজিয়াম এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, জনযোগাযোগ, সুনীল ও বৃত্তাকার অর্থনীতিসহ নিরাপত্তার প্রচলিত এবং অপ্রচলিত ক্ষেত্রসমূহে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে, বাংলাদেশ ইইউয়ের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে যাতে বিশ্বে কোথাও মানুষকে যুদ্ধের ভয়াবহতা সহ্য করতে না হয়, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায় এবং বিশ্বজুড়ে মানবতার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখা যায়।
ইইউ এক্সটার্নাল এ্যাকশন সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিকলাস কাভার্নস্টর্ম বলেন, বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, ন্যায়বিচার, সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে একসঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে যা বিদ্যমান অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ককে আরো মজবুত করে চলেছে। তিনি শীঘ্রই বাংলাদেশের সঙ্গে পার্টনারশিপ এন্ড কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে ইইউয়ের আগ্রহের কথা জানান।
বেলজিয়াম সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রদূত জেরোএন কুরম্যান অভূতপূর্ব উন্নয়ন অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ও বেলজিয়ামের ঘনিষ্ঠভাবে কাজ আগামী দিনে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে নতুন রূপ দেবে।
রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি রাষ্ট্র, সরকার ও বন্ধুদের অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ বিশ্বের ৩৩তম বৃহত্তম, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে এবং এক্ষেত্রে বেলজিয়াম এবং ইইউয়ের সঙ্গে নিবিড় অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সম্মানিত অতিথিদ্বয় ও রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ এ সময় স্বাধীনতার ৫৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি কেক কাটেন।
বেলজিয়াম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ, রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য, বেলজিয়ামের রাজনীতিকবৃন্দ, গণমাধ্যম, থিংক ট্যাঙ্কস, একাডেমিয়া, ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে বসবাসরত বাংলাদেশ কম্যুনিটির সদস্যগণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।