Main Logo
আপডেট : ১৭ জানুয়ারী, ২০২৪ ১১:০৭

মশা বিষয়ক রম্য গল্প

হাতি নয় মশার সঙ্গে তুলনা করাই ভাল

ওমর ফারুক

হাতি নয় মশার সঙ্গে তুলনা করাই ভাল
ওমর ফারুক

আমার এক বন্ধু সম্প্রতি মশা নিয়ে বিস্তর গবেষনায় নেমেছে। তার মতে মশা একটি উপকারী পতঙ্গ। মশার কারনেই মানুষ নিয়ম তান্ত্রিক জীবন বেচে নিয়েছে। তা না হলে প্রতিরাতে মশারি টানানোর মতো বিরক্তিকর কাজটি মানুষের অভ্যাসে পরিণত হতো না। এ ছাড়া মশারি শিল্পে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাও কম কিসে। আর এই মশা দেখেই নাকি তৈরি হয়েছে উড়োজাহাজ। যা দিয়ে সারা বিশ্বকে এক সুতোয় গাঁথা সম্ভব হয়েছে। উড়োজাহাজ উড়ার সময় যে ধরনের শব্দ হয় কানের কাছ দিয়ে মশা উড়ে গেলেও নাকি একই ধরনের শব্দ হয়। যে দুই ভাই উড়োজাহাজ বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন তাদের এক ভাইয়ের কানের ভেতর ভুল করে মশা ঢুকে গিয়েছিল। তখন থেকেই তাদের উড়োজাহাজ বানানোর পরিকল্পনা শুরু। 
এখন পর্যন্ত গবেষনা করে বন্ধু জানতে পেরেছে মশাদের বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন প্রজাতি তৈরির পেছনে কাজ করছে। যার সর্বশেষ সংস্করন এডিস মশা। যার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। এর আগ পর্যন্ত ম্যালেরিয়া ছড়ানোর মতো মশা আবিস্কার করা গিয়েছিল। এডিস নিয়ে মশা রাজ্যে নাকি ব্যাপক আনন্দ ফুর্তি চলছে। বন্ধু জানালো- মশাদের আবিস্কার এখন চরম পর্যায়ে। কয়েল জ্বালালে কিভাবে রক্ষা পেতে হয় সেটা তারা রপ্ত করে নিযেছে। কয়েল নামের বিষের আঘাতে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লেও মশাগুলো দিব্যি হেসে খেলে বেড়াতে কোন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। তাদের জন্য কয়েল প্রতিরোধক টিকাও আবিস্কার করেছে মশা বিজ্ঞানীরা। 
আমার বন্ধু নতুন এক খবর পেয়েছে। মাশাদের রাজা নাকি হুকুম দিয়েছে নতুন ধরনের এক মশা তৈরি করার জন্য। যে মশা শুধু প্রতারক নারীদের কামড়াবে। সেই কামড়ে মুখ মন্ডলের অবস্থা এমন হবে যে, এসিড মারার দরকার হবে না। তবে পুরুষের জন্যও রয়েছে দু:সংবাদ। মশা রাজা নাকি প্রতারক পুরুষদের জন্যও মশা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এই মশার কামড়ে পুরুষরা নারীর প্রতি মোহ হারিয়ে ফেলবে। সাবেক বর্তমান কোন প্রেমিকার কথাই মনে রাখতে পারবে না। 
বন্ধুর মতে মশার এতোসব উপকারীতার কথা চিন্তা করে দেশে মশার উৎপাদন বাড়ানো জরুরী। এখন সময় এসেছে মশা উৎপাদনের উপর মনোযোগ দেয়ার। তাদেরকে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষন দিয়ে আনা যেতে পারে। মশার কানে, চোখে, নাকে এমন সব ডিভাইস বসাতে হবে যাতে দূর থেকে ইঙ্গিত বুঝতে পারে। এটির দায়িত্ব নিতে পারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদেরই বেশি কাজে অসবে। বিশেষ করে পুলিশের দাঙ্গা দমন বিভাগ এর ভাল ফল পেতে পারে। কিন্তু কিভাবে? বন্ধু জানালো- কোথাও কোন বিশৃঙ্খল পরিবেশ হলে পুলিশ মশার ভান্ডার খুলে দিলেই হলো। গুলি, জল কামান, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার সেল এসব ছোড়ার দরকারই হবে না। আর যদি পুলিশ মাইকে একবার বলে দেয় এখন যে মশা ছাড়া হচ্ছে সেগুলো এডিস মশা। তা হলেতো আর কোন কথাই নেই। সবাই নেতা-নেত্রীর হুকুম তামিল না করে বাসায় গিয়ে মশারী টানিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবে। আর আন্দোলন দমাতে পুলিশকে বেগ পেতে হবে না।  এ ছাড়া বিরোধী দলও মশা পালন করতে পারে। মশা বাহিনী দিয়ে সহজেই দাবী আদায় করা যাবে। তা হলে হরতাল, অবরোধ, বোম ফাটানো, পেট্রোল বোমাসহ নানা পন্থা দরকার হবে না। মশা কামড়িয়ে দাবী আদায় করার মতো সহজ কাজ আর কিছুতেই সম্ভব না।
বন্ধুৃ আরো জানালো- অধিকাংশ প্রজাতির স্ত্রী-মশা স্তন্যপায়ী প্রাণীর রক্ত পান করতে পছন্দ করে। বোঝা যাচ্ছে স্ত্রী জাতীয়রা সব জায়গাতেই বিপদজনক।  বন্ধুর মতে- বর্তমানে ঢাকা শহরে সবুজ নগরী গড়ে তোলায় সরকারকে মনোযোগী হতে দেখা যাচ্ছে। আর এটাই মশা উৎপাদনের যথার্থ সময়। এডিস মশা তৈরির জন্য বাড়ির ছাদে বেশি বেশি টব রাখা যেতে পারে। মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশন আরো বেশি নকল ওষুধ ব্যবহার করতে পারে।
সেদিন দুপুর বেলায় আমার সেই গবেষক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখি সে মশারী খাটিয়ে শুয়ে আছে। দেখেতো আমি তাজ্জব। বন্ধু বললো- আর বলিস না দিনের আলোতে এডিস মশা কামড়াতে পছন্দ করে।  আমি হাসতে হাসতে বললাম- তোর মতো গবেষক মশার ভয়ে জালের ভেতরে নিজেকে পালিয়ে রেখেছিস। বন্ধু বললো- উপায় নেই। হাতির চেয়ে মশা বড়। তার যুক্তি, কাউকে আক্রমন করতে হলে হাতির অনেক বেগ পেতে হয়। কিন্তু মশা মনের মাধুরী মিশিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করতে করতে হুল ফুটিয়ে আক্রমন করে চলে যায়। সঙ্গে নিয়ে যায় মহা-মূলব্যন রক্ত- আর দিয়ে যায় জীবানু। এর পর হাসপাতাল ডাক্তার কত কি। সেই ক্ষমতা হাতির নেই। সুতরাং বাঘ, হাতি, সিংহ এদের সঙ্গে মানুষকে তুলনা না করে মশার সঙ্গে তুলনা করা অনেক ভাল।

উপরে