Main Logo
আপডেট : ১৩ জুন, ২০২৪ ১১:০৬

আজবের সিনেমা দেখা

ওমর ফারুক

আজবের সিনেমা দেখা

৮০-এর দশকের কথা। গ্রামের এক রিক্সাচালক রসু চাচাকে খুব সম্মান করতো। রসু চাচা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের একজন। কিন্তু রসু চাচার রস বোধ ছিল মারাত্মক। একবার ওই রিক্সা চালক আজব মিয়াকে রসু চাচা জিজ্ঞেস করেন-

-কীরে আজব তুই কোনদিন সিনামা দেখছস? আজব লজ্জা পায়। বলে-
-না চাচা দেহি নাই। খালী নামই হুনছি।
-সিনেমা দেখবি?
-যদি আফনে দ্যাহান।
-তয় চল। কিন্তু সিনামা দেখতেতো টেহা লাগবো। 
-কয় টেহা চাচা।
-দেখতে তো ১০ টেহা লাগে। তুই পাচ টেহা দিস।
রসু চাচার কথায় রাজি হয় আজব। সে জীবনের প্রথম সিনেমা দেখতে যাবে- বিষয়টা ভেবেই কেমন পুলকিত হয়। ঠিক হয় পরদিন ঈশ্বরগঞ্জের সোনালী টকিজ-এ গিয় দুপুরের শো দেখবে। দুপুরের শো চলতো দুপুর ১২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত। কথা মতো পরদিন রসু চাচা আজবের রিক্সায় চড়ে সাত মাইল দূরের সোনালী টকিজের কাছে যায়। সিনামা হল থেকে কিছুটা দূরে ফাঁকা জায়গায় রিক্সা রেখে চাকায় তালা লাগিয়ে রসুর চাচার পেছন পেছন হেঁটে যায় আজব। আগেই পাচ টাকাও তুলে দেয় রসু চাচার হাতে। 
সোনালী টকিজের টিকিট কাউন্টারের সামনের ফাকা জায়গাটিতে একটি বড় ফ্রেমে যে সিনেমা চলতো তার কিছু স্টিল ছবি টানিয়ে রাখা হতো। যাতে দর্শকরা বুঝতে পারেন সিনেমায় কি কি দৃশ্য দেখা যাবে। রসু চাচা আজবকে সেই ফ্রেমের নিচে নিয়ে দাড় করায়। ওই ফ্রেমে তখন আলমগীর শাবানার সিনেমার স্টিল ছবি টানিয়ে রাখা ছিল। আজব খেয়াল করলাে বেশ ক'জন মানুষ মনোযোগ দিয়ে ওই ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। রসু চাচা আজবকে বললেন 
-তুই সিনামা দেখ আমি একটু ঘুইরা আসতাছি। এই বলে রসু চাচা টিকিট কেটে উপরে চলে গেলেন। আর আজব ওই স্টিল ছবিগুলোকেই সিনেমা মনে করে দেখতে থাকে। একটি ছবিতে দেখতে পায় শাবানার চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে। সুন্দরী মহিলার চোখ বেয়ে পানি ঝড়ার দৃশ্য আজবকে আবেগাপ্লুত করে। মনে মনে ভাবে আহা মানুষ এই কারণেই সিনামা দেখতে আসে। 
আরেকটি ছবিতে আলমগীরকে ঝড়িয়ে ধরে অছেন শাবানা। ওই ছবি আজবকে নিয়ে যায় রোমান্টিক জগতে। সব মিলিয়ে ফটো ফ্রেমে সিনেমা দেখে বেশ আনন্দিত আজব। একেকটি ছবিতে চােখ বুলানোর পর আজবের চোখ সরাতে ইচ্ছে করে না। 
প্রায় তিন ঘন্টা পর রসু চাচা এসে দেখেন আজব মনোযোগ দিয়ে ফটোর দিকে তাকিয়ে আছে। 
রসু চাচা এমন কাণ্ড করে একটুও হাসলেন না। তিনি আজবের পিঠে হাত রাখলেন। আজবের এদিকে খেয়াল নেই। সে শাবানার দৌড়ে যাওয়ার ফটোতে মনোযোগ দিয়েছে। 
এবার রসু চাচা আজবের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন-
-আজব সিনামার টাইমতো শেষ। যেন সজাগ হয় আজব। 
-তাই নি চাচা। আর একটু দেহন যাইবো না।
-তা যাইবো। কিন্তু আরো পাচ টেহা দেওন লাগবো। 
এ কথা শুনে আজব আর আগ্রহী হয়নি সিনেমা দেখার। আজব বলে-
আইজ আর টেহা নাই। আরেক দিন অইয়া আবার  সিনামা দেখুম। বলে দু'জন রওয়ানা হন বাড়ির দিকে। 

উপরে