Main Logo
আপডেট : ২ জুলাই, ২০২০ ১৯:৪৯

রাত আর রাত নেই বিমান বাহিনীর পাইলটদের সামনে

অনলাইন ডেস্ক
রাত আর রাত নেই বিমান বাহিনীর পাইলটদের সামনে

আকাশে উড়ছে হেলিকপ্টার। রাতের বেলা নিচে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। অথচ একটি গ্রামে নামতে হবে পাইলটকে। হেলিকপ্টারে উঠাতে হবে করোনা আক্রান্ত এক মুমূর্ষু রোগীকে। নিয়ে আসতে হবে বড় কোনো শহরে উন্নত চিকিৎসার জন্য। বিষয়টি কঠিন তবু অন্ধকারে ঠিকই নামল হেলিকপ্টার। সাধারণ চোখে অন্ধকারে কিছু দেখা না গেলেও হেলিকপ্টারের পাইলট ঠিকই প্রায় দিনের মতো দেখতে পাচ্ছিলেন সব কিছু। রোগীকে সহজেই তুলে নিয়ে আসলেন।

এটা কোনো কল্পকাহিনী নয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পাইলটরা রাতে হেলিকপ্টার চালানোর সময় এভাবেই দেখতে পান নাইট ভিশন গগলস প্রযুক্তির মাধ্যমে। এ প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ার পর থেকেই রাতে বিনা ভয়ে হেলিকপ্টার চালাতে পারছেন বৈমানিকরা।

গত মঙ্গলবার রাতে কয়েকজন সাংবাদিককে একটি এনভিজি স্পেশাল হেলিকপ্টারে করে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মাওয়া এলাকায়। সেটি চালাচ্ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমান ও উইং কমান্ডার সালাউদ্দিন আহমেদ। আর ভেতরে থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয়ে বুঝিয়ে দেন উইং কমান্ডার চৌধুরী ওমর হায়দার ও স্কোয়াড্রন লিডার মির্জা মোস্তফা জামাল।  রাত ৮টার দিকে মাওয়া এলাকায় পদ্মার ওপরে গিয়ে এক হাজার ফিট ওপর থেকে নাইট ভিশন গগলস ব্যবহার করে দেখা গেল পদ্মা ব্রিজের খুটি, পদ্মার চরসহ নানা এলাকা। অথচ গগলস থেকে চোখ সরালেই অন্ধকারে সেখানে কিছু দেখা যাচ্ছি না। যা প্রত্যেককে রোমাঞ্চিত করে। এমন প্রযুক্তি বাংলাদেশে এসেছে কয়েক মাস আগে। 

এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাতজন মুমূর্ষু রোগীকে রাতের বেলা সিলেট, যশোর, খুলনা, ভোলা, ময়মনসিংহ ও বান্দরবান থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামে গত বছর ১৯ জুন বান্দরবানে সেনাবাহিনীর সৈন্যভর্তি একটি পিকআপ রাত্রীকালীন অপারেশন চালানোর সময় দুর্ঘটনায় পড়ে। খবর পেয়ে বিমান বাহিনীর এডব্লিউ-১৩৯ হেলিকপ্টার বান্দরবানের দুর্গম এলাকা হতে মুমূর্ষু ৬ জন সৈন্যকে রাতের বেলায় উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা সিএমএইচে স্থানান্তরে সক্ষম হয়।

পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা এলাকা জুড়ে গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা হেলিকপ্টার নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন সাহায্যের হাত বাড়াতে। রাতের বেলা বেল-২১২ হেলিকপ্টার নিয়ে যাওয়া এবং সুচারুভাবে দায়িত্ব পালনের পেছনে কাজ করেছিল নাইট ভিশন গগলস। এ প্রযুক্তির সাহায্যে অগ্নিনির্বাপণ অপারেশনে সহায়তা দিয়ে প্রসংশিত হয় বিমান বাহিনী।

মঙ্গলবার রাতে হেলিকপ্টারটি রাজধানীর ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় নিচ থেকে অনেককে লেজার লাইটের আলো ফেলতে দেখা যায় হেলিকপ্টারে। বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, লেজার লাইটের আলো ও বড় ঘুড়ি হেলিকপ্টার চালনায় সমস্যা সৃষ্টি করে।

বিমান বাহিনীর এয়ার কমোডোর মো. মাহামুদুর হাসান জানান, উড্ডয়ন নিরাপত্তার নিশ্চিতে নবদিগন্তের সূচনা করেছে নাইট ভিশন গগলস যা হেলিকপ্টার উড্ডয়ন পরিচালনায় যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে এখন যে কোনো দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে দিবা ও রাত্রিকালীন অপারেশন পরিচালনা করা সম্ভব। 

সাধারণত রাতে দৃষ্টিশক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে ভূমির কাছাকাছি উড্ডয়নের সময় ভূমিস্থ প্রতিবন্ধকতাসমূহ হেলিকপ্টার উড্ডয়ন পরিচালনায় বাধার সৃষ্টি করে যা পৃথিবীব্যাপী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ পরিস্থিতিতে নাইট ভিশন গগলসের আবিষ্কার ও অন্তর্ভুক্তি বিমান চালনায় একটি নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করে।

জানা যায়, বিড়াল গোত্রীয় প্রাণী রাতের অন্ধকারেও সীমিত পরিসরে দেখতে পায়। আর তা দেখেই গবেষণার সূত্রপাত হয়। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৯৬৫ সালে স্টার লাইট স্কোপ যুক্ত প্রথম নাইট ভিশন গগলস তৈরি হয়। 

বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে আকাশচুম্বী স্থাপনা, মোবাইল নেটওয়ার্ক এন্টেনা দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে। রাতের বেলায় দৃষ্টি শক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে এসব স্থাপনা স্বল্প উচ্চতায় হেলিকপ্টার উড্ডয়ন পরিচালনায় ঝুঁকির সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় নাইট ভিশন গগলস প্রযুক্তির সহায়তায় ভূমি থেকে স্বল্প উচ্চতায় উড্ডয়নকালে বৈমানিকগণ যেকোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে চলতে সক্ষম হন। 
এছাড়া এই গগলস ব্যবহারের কারণে বৈমানিকের মনোবল বৃদ্ধি পায়। অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়ে। গভীর সমুদ্র ও দেশের যেকোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারসমূহ রাত্রিকালীন উড্ডয়ন পরিচালনা ও উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম। 

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিদ্রোহী জঙ্গীগোষ্ঠিগুলো মূলত রাত্রিকালে শান্তিরক্ষী বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া অসুস্থ শান্তিরক্ষীদের রাত্রিকালীন স্থানান্তরসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে দুর্গম স্থানে হেলিকপ্টার সাপোর্ট শান্তিরক্ষী এভিয়েশন কন্টিনজেন্টের একটি অপরিহার্য করণীয় বলে গণ্য হয়।
 
বর্তমানে বিমান বাহিনীর ৯টি হেলিকপ্টারে এ প্রযুক্তির ব্যবহার করা যাচ্ছে। বেল-২১২ ও এমআই সিরিজ হেলিকপ্টারের নাইট ভিশন গগলসের প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বৈমানকরা কানাডা ও ইউক্রেনে প্রশিক্ষণ নেন।

সদ্য কেনা সি-১৩০জে পরিবহন বিমানেও নাইট ভিশন গগলসের প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং অতি অল্প সময়ে একই সক্ষমতা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পরিবহন বিমান বহরেও সংযোজিত হওয়ার ব্যাপারে তারা আশাবাদী।

সূত্র : কালের কণ্ঠ

উপরে