অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে
২২১ টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। গত নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ২২১ টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ২১৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৮৪ টি। নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে ২২১ টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছ।
পুলিশ জানায়, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অস্ত্র বিক্রেতা ও নির্বাচনে সহিংসতা চালাতে পারে এমন সব রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের তালিকা ধরে অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানে অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চল। সীমান্ত হয়ে অবৈধ অস্ত্রের প্রবেশ রোধে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে; গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র পাচারের রুটগুলোতে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা তিন সহস্রাধিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে।
সূত্রমতে, বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট হয়ে পিস্তল, রিভলবারসহ বিভিন্ন অস্ত্র চোরাচালান হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি চোরাচালান হয়ে থাকে ১৭টি পয়েন্ট বা রুট দিয়ে।
রুটগুলো হলো- চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, একই এলাকার সোনামসজিদ, আজমতপুর, বিলভাতিয়া, রহনপুর, ঝিনইদহের মহেশপুরের জুলুলী, সাতক্ষীরার কলারোয়ার তলুইগাছা, যশোরের বেনাপোল, চৌগাছা, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, সাতক্ষীরার শাঁকারা, মেহেরপুর, কুমিল্লা, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এবং কুষ্টিয়ার সীমান্ত এলাকা।
পুলিশের একাধিক জেলার এসপি জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে মৌখিকভাবে সব জেলার পুলিশ সুপার ও অন্যান্য ইউনিটকে অস্ত্র উদ্ধারে জোর দিতে বলা হয়েছিল। নির্বাচনে অস্ত্রবাজি রুখতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান মাসখানেক আগে থেকেই জোরদার করা হয়েছে। এ সময় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের তালিকা তৈরি করা হয়। সে তালিকা ধরে অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রের তথ্য, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রথম ৮ মাসে ২ হাজার ৭৮৫টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। এছাড়া সীমান্তঘেষা ভারতের মণিপুর রাজ্যে সম্প্রতি লুট হওয়া কয়েক হাজার অস্ত্র সেখানকার সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকতে পারে।
গত ৩ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে জারি করা এক পরিপত্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করতে এবং নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূলে রাখতে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাস্তানদের তালিকা করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসহ সব ধরনের বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার পরিচালনা জোরদার করতে বলা হয়।
বিজিবির উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্ত বেশি সেনসেটিভ হয়। আমরা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছি যেন অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক আমাদের দেশে না আসতে পারে; যেটা আমাদের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে। আগের তুলনায় বেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে সীমান্ত থেকে।
কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার আমাদের নিয়মিত কাজ। নির্বাচন উপলক্ষে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী শনিবার (আজ) থেকে আমরা এ অভিযান আরও জোরদার করছি, যেন নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্র ও পেশিশক্তির ব্যবহার না হতে পারে।
গত ৭ অক্টোবর সীমান্ত পেরিয়ে রাজশাহীতে বিদেশি অস্ত্রের একটি চালানসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৫। তাদের কাছ থেকে ৪টি বিদেশি রিভলবার, ৩টি বিদেশি পিস্তল, ৪টি ম্যাগজিন, ৮ রাউন্ড তাজা গুলি, ৮টি গুলির খোসা ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। সংসদ নির্বাচনে সহিংসতার জন্য এসব অবৈধ অস্ত্র আনা হয়েছিল, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সেসব অস্ত্র-কারবারিরা এমনটাই জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, সারাদেশে লাইসেন্সধারী আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে ৫০ হাজার ৩১০টি। এর মধ্যে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র ৪৫ হাজার ২২৬টি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশ থেকে র্যাব ৬৪২টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর সঙ্গে জড়িত ৩১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে বিজিবি ৪৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৭টি বিভিন্ন ধরনের বন্দুক উদ্ধার করে।