আপডেট : ২২ নভেম্বর, ২০২৩ ০৮:৩৪
অণুগল্প
জহুরার বিলাপ
কোহিনুর রহমান
ও আল্লাহ আমার রিনি কই! চিৎকারে গলা ফাটাচ্ছে জহুরা।তখনো আলো ফোটেনি। দূর মসজিদের ফজরের আজান ভেসে আসছে। বাড়ির লোকজন কেউ কেউ ঘুমে। কেউ আবার আড়মোড়া ভাঙছে।
জহুরার বিলাপে সবাই সজাগ। কে কাঁদছে? কোথায় কাঁদছে? কাক ডাকা ভোরে! কান্নার জের ধরে লোকজন জড়ো হয় রান্না ঘরের পিছনে!
জহুরার বড় ভাই এগিয়ে গিয়ে চমকে যায়! বোনের কোলে ঝিনি কে দেখে। বলে-
কি রে জহু ঝিনিরে কই পাইলে? ও না সাতদিন আগে মইরা গেলো! রিনি কই...?
বাড়ির লোকজন সবাই অবাক!
সত্যিই তো রিনি কই ? আর এই মরা মাইয়া জ্যাতা অয়া কইত্তে আইলো ? সাতদিন আগে যার এই জংগলের কোণাত মাডি অইলো!
কান্নাভরা গলায় জহুরার কথা-
মাডি দেয়া গেছি তরি ঝিনির মুখটা এক সেগেন্ডের লাগি ভুলতারিনা। দুধ দুইডা ফোইল্যা গেছে। সারারাইত বেদনা করে। চোহ ঘুম নাই। আমার ছয় মাসের কাইছলা ছাও...!
রিনিরে কোল লইয়া কব্বর দেখবার আইছিলাম। হেইলারে ঘুম থুইয়া। এক মাইল পথ আইতে আইতে রিনির ঘুম ভাঙ্গে না। চিন্তা কল্লাম,
ঘুমের মাইয়া কি দরহার কব্বরও নেওয়ার! যাইয়াম আর আইয়াম! রিনিরে এইহানে হুতায়া থইয়া গেছি। বনের চালাডাত। খেড়ের উফরে। শইল্লো ওন্না প্যাচেয়া। আয়া দেহি ছেরি নাই! ও আল্লারে আমার রিনি, বলেই জ্ঞান হারালো জহুরা।
লোকজন কেউ জহুরার মাথায় পানি ঢালে। কেউ রিনিকে খুঁজতে দৌঁড়াচ্ছে। কেউ কয়-দুই বছরের মাইয়া ঘুম ভাইঙ্গা মা'রে না পায়া কোন দিগে গেছে কেডা জানে? কেউ কয়-আরে নাহ এইডা অইন্য ঘডনা। ঘুম ভাঙ্গলে কান্দা হুনা যাইতো! কব্বরতো আর দূরা না!
জহুরার হুশ আসার পর আবার বলে-
কব্বরের সামনে যায়া চমহেয়া গেছি,দেহি-
মস্ত বড়ো কব্বর! খোলা। বাঁশ চাঙ্গারি কিছু নাই! ভিত্তে অত বড়ো সাদা ধবধবা সুন্দর এক ইংরাজী বেডা আধা হুতা! ঝিনিরে লাম্বা দুই হাত দেয়া উফরে তুইল্যা আমার দিগে চায়া রইছে! উত্তর দিগে পাও! দক্কিন দিগে মাতাডা উঁচা কইরা। বুঝতাছি আবুডা আমারে দিবার চায়!
তাহায়া দেহি ঝিনি ঠোঁড দুইডা আমডাইতাছে । তাড়াতাড়ি কইরা কোল লই। দুধ দিতেই চুকচুক শব্দ কইরা খায়। ঝিনিরে লয়া রিনিরে নিবার আইছি! এইহানো আয়া দেহি মাইয়া নাই!
এর ভেতর জহুরার চাচাত ভাই বাবলু হাঁপিয়ে দৌড়ে এসে বলে-জহু বুজি রিনিরে হেয়ালে খাইছে! মইল্লা বাড়ির পিছের জঙ্গলো কলা পাতাত ইট্টু আড্ডি, রক্ত পইড়া রইছে! এই যে দেহ- বলে সামনে ফেলে রক্ত মাখা ছেঁড়া ওড়না...!