আজকের গল্প
ভিনগ্রহে রায়হান
আশরাফ আলী চারু
রায়হান মা-বাবার একমাত্র সন্তান। ছোট থেকেই আদরের ঘাটতি নেই তার। তবু মাঝে মাঝেই তার সামান্যতেই মন খারাপ হয়। মা-বাবা চান ছেলে ভালোভাবে লেখাপড়া করে ভালো মানুষ হোক। অথচ রায়হানের পড়াশোনার চেয়ে ভালো লাগে ঘুরে বেড়াতে। মা ঘোরাফেরা করতে মানা করেছেন বলে সে আজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছে। তারপর হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছে দূর অজানা একদেশে, সে অনেক দূরে। জনমানবহীন যে দেশ।
ঘুরতে ঘুরতে রায়হান বেশ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছে। কোনো খাবারের ব্যাবস্থা নেই এখানে। সে খুব চিন্তিত হয়ে পড়লো। মনে হতে থাকলো না খেয়েই মরতে হবে তাকে। ঠিক এসময়ই কোথা থেকে এক অদ্ভুত লোক এলিয়েনের মতো এসে দাঁড়াল তার পাশে। হাতে নানান রকমের ফলের ঝুড়ি। রায়হান এলিয়েনরূপি এই লোককে দেখে যতটা না আশ্চর্য হলো তার চেয়ে বেশি আশ্চর্য হলো তার ক্ষুধা নিবারনের জন্য যে ফলগুলো এনেছে তা দেখে। লোকটিও সত্যি সত্যিই এলিয়েন ছিল।
রায়হান কিছু বলার আগেই এলিয়েন গলা বাড়িয়ে বললো- স্বাগতম ভিনগ্রহের প্রাণী। তোমাকে বরন করবো বলে আমার এই অপেক্ষা। দাদীর মুখে প্রায়ই শুনি তুমি আসবে। আজ আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি আনন্দ। আমি জানি তুমি ক্ষুধার্ত। আগে ফলগুলো খাও। তারপর আমার সাথে আমাদের বাসায় যাবে।
ক্ষুধার্ত রায়হান ফল খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো তোমাদের এ দেশের নাম কি ভাই? এখানে কি আর মানুষজন নেই? ঘনবসতি নেই বললেই চলে!
- না, ভাই, মানুষজন কোত্থেকে থাকবে! আমরাই মাত্র কিছু সংখ্যক এলিয়েন এখানে থাকি। দাদী বলেছেন একসময় এই দেশটি আমাদের লাখো কুটি এলিয়েনদের পদভারে মুখরিত ছিল। কিন্তু বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঝড় ও ঝামেলার কারনে আমাদের অস্তিত্ব প্রায় বিলিন হতে চলেছে। দাদীর মুখের কথা থেকে জেনেছি - ভিনগ্রহ থেকে কেউ এসে আমাদের জীবন-মান ও এখানে টিকে থাকার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাবেন। সেই পরামর্শ থেকে আমরা সব ঝড় ও ঝামেলা মোকাবেলা করে বাঁচতে পারব। আমার বিশ্বাস সেই প্রাণীটিই তুমি।
এলিয়েনের কথায় রায়হান বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো। যদি তার দাদীর কথামত সে প্রাণীটিই রায়হান হয় তবে, কী পরামর্শ দিবে ভাবতে লাগল। ভেবেচিন্তে একপর্যায়ে বললো- আচ্ছা তোমাদের এদেশের নাম কি গো?
- মঙ্গল। মার্স নামেও ডাকে অনেকেই।
- ও তাইতো বলি মাটির রঙ এতো লাল কেন? জানও আমি পৃথিবী থেকে এসেছি। পৃথিবীর মানুষেরা এটাকে লালগ্রহ বলেও ডাকে।
-পৃথিবী থেকে এসেছো! আশ্চর্যের শেষ নেই এলিয়েনের।
-কি বিশ্বাস হচ্ছে না?
- কিন্তু ! ওরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাহন পাঠায় এখানে। বাহনগুলো এখানে নেমে ঘুরে বেড়ায়, মাটি খুঁড়ে, নানা রকম ছবিও তোলে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন মানুষ ওইসব যন্ত্রের সাথে আসতে পারেনি। আর তুমি কি-না,,, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না ভাই। আমি দাদীর কাছে যতটুকু শুনেছি পৃথিবীর আবহাওয়া আর এখানের আবহাওয়ার কোনোরকম মিল নেই। এখানে
৯৫.৯৭% কার্বন ডাই অক্সাইড ১.৯৩% আর্গন
১.৮৯% নাইট্রোজেন০.১৪৬% অক্সিজেন
০.০৫৫৭% কার্বন মনোক্সাইড সুতরাং পৃথিবীর কোনো প্রাণীর এখানে বেঁচে থাকার কথা নয়।
-সৃষ্টিকর্তা চাইলে সবই সম্ভব ভাই। পৃথিবীর মানুষেরা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখছে এখানে বসবাস করা যায় কিনা?যেহেতু এই লাল গ্রহ আর পৃথিবীর দিন রাত্রির সময়কাল প্রায় একইরকম সুতরাং এই লাল গ্রহ নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই ।
-তাই নাকি? এজন্যই যন্ত্রগুলো পাঠায়?
-হুম,ঠিক ধরেছো, যন্ত্র পাঠিয়ে ইতিমধ্যে পৃথিবীর মানুষ জানতে পেরেছে দক্ষিণ মেরুর হিমছত্রটিতে জলীয় বরফ আছে। যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আচ্ছা একটা কথা বলওতো পৃথিবী থেকে পাঠানো যন্ত্র তোমরা দেখতে পাও অথচ তোমাদের ছবি ওঠে না কেন? ওই যন্ত্রে তো ছবি তোলার ক্যামেরা থাকে।
-আমাদের ছবি ধারন করার ক্ষমতা হয়তো ওই ক্যামেরার নেই। তাছাড়া পৃথিবীর মানুষ আমাদের ছবি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে যেন এখানে বসবাস শুরু করতে না পারে এটাই হয়তো বিধাতা চান।
-ভালোই হতো। মানুষ আর এলিয়েন পাশাপাশি বসবাস করতাম কি মজাই না হতো।
-আমার কি মনে হয় জানও, পৃথিবী যেমন মানুষের জন্য তেমনি মঙ্গল গ্রহ এলিয়েনের জন্য। যারে যেখানে মানায় সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকর্তা। চলও অনেক কথা হলো এবার দাদীর কাছে নিয়ে যাই তোমাকে।
-পৃথিবীর মানুষের কি ধারণা জানও? যখন এখানকার বরফ গলে পানি হয়ে যাবে তখন সারা মঙ্গলেই বন্যা হবে। সৃষ্টি হবে সাগর নদী। জন্মাবে তৃণলতা,বৃক্ষ। অক্সিজেনে পরিপূর্ণ হবে সারা গ্রহ। বেড়ে যাবে বায়ু মন্ডলের ঘনত্ব। তবে অপেক্ষা করতে হবে বহু বহু বছর। চলও তোমার দাদীর সাথে দেখা করি। আমাকে আবার ফিরতে হবে।