Main Logo
আপডেট : ২৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০৯:৪৫

আজকের গল্প

বিবর্ণ স্বপ্ন

ফরিদা বেগম

বিবর্ণ  স্বপ্ন
ফরিদা বেগম
মাজুবাই খারাইলা কেরে! তাড়াতাড়ি আও না ! শীত লাগতাছে । সারাদিন আইট্টা বিক্ষা করতে 
করতে অহন আর ঠ্যাঙে কুলাইতাছে না । 
রোগের ভারে বেঁকে যাওয়া বাইশ বছরের হাসিম
তাড়া করে মাজেদকে। 
আরে আইতাছি তো!  অই দেহছ না দোহানের 
টেলিবিশনে আমরার রাজা- রানি বাসতাছে ! 
কই দেহি দেহি !  পেছনে পড়া কালারবাপ এগিয়ে আসে সকৌতুকে । 
-ইস্,  কী সুন্দর আর বালা আমরার  রানিডা ! বলে মাজেদ মিয়া । 
-বালাই তো !  মাজেদ মিয়ার কথার সাথে যোগ দেয় হাসিম । গেলবছর বইন্যার সময় যহন আমরার তেরান শিবিরে রাজা সাইব আইছিন আমি অক্করে কাছেত্থে দেকছি । মনো আছে না উড়াজাহাজ দিয়া তবন আর শারির গাট্টি লইয়্যা আইছিন । পরে হে নিজের আতে কয়ডা তবন আর শারি দিয়া বাহিডি অবিচারের আত দিয়া থইয়া পেলেনে উইট্টা গেল গা। 
হেষে অবিচাররা আমরারে আর কিছুই দিল না। 
 হরে হাসিম বালাই মনো আছে । অবিচারের কাছে তবন চাইয়া কী লাডির বাড়িই না খাইছিলাম। অহনও জাগাডা বিষ করে । মাজেদ মিয়া নিজের পিঠে হাত বুলায়! 
- মাজুবাই দুষটা আসলে আমরার রাজার না । বলে হাসিম । মাজিদ মিয়া ও কালারবাপ প্রতিবাদ জানায় , বলে , তে কার দুষ ?  
-দুষ অইছে অবিচারের আর...
হাসিমের কথা শেষ করতে দেয় না কালার বাপ। ক্ষোভে ফেটে পড়ে ,   রাজা তবন আর শারির গাইট লইয়া আয় , আর দুই চাইরডা নিজে দিয়া বাহিডি অবিচাররে দিত দিয়া যায়গা । তারা পরে দেয় কি নাদেয় হেই খুঁইজ লয় ? 
হাসিম যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করে ।   
-আসলে কামডা কী অয় জান বাই , অই যে দেহ না রাজা যহন আয় হের লগে ফটুঅলাও আয়। যতক্ষণ ফটুঅলা ফটু লইতে থাহে ততক্ষণই রাজাসাইব কাপর দিতে থাহে। রাজাসাইবও ফটুর লগে লগে দৌড়তে থাহে। আমরার রাজাসাইবের কী দুষ অহন কওছেন দেহি ! ফটুঅলা যুদি না দৌড়ত রাজাসাইবও কাপর দিতেই তাকত । "
 -হাছাই তো কইচছ । আমরার রাজাসাইবের তো দুষ না । বেক দুষ অইল অই ফটুঅলা বেডার। বলে মাজেদ মিয়া। 
-অই দেহ বাই , আমরার রাজাসাইবের লগে দেহা করত আইছে আরেক দেশের রাজারানি । 
হাসিম টিভির পর্দায়  সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করায় । -তারা কী সুন্দর আরামের চিয়ারে বইতাছে ,
বেকটা শইল ডাইবা পরতাছে । 
 কালারবাপের কথায় রাজকীয় সোফায় ডুবে যাবার অনুভূতির সুর । 
- আইচ্ছা কছেন মাজেদ ,  তুই যুদি রাজা অছ 
  তে কীতা করবে? জানতে চায় কালারবাপ । 
-কী কইলা কালা বাই আমি অইয়াম রাজা ? 
 -কেরে !  হুনছি  আল্লা ইচ্ছা করলে ফহিররে রাজা বানাইতে পারে । আমরা তো ফহির,  বিক্ষা কইরা খাই । আল্লাহ চাইলে  আমরা রাজা অইতে পারতাম না কেরে ? 
-অইতে পারলে বালাই  তো । মাজিদ মিয়া যেন সত্যি সত্যি রাজা হয়েই যাবে । রাজা হওয়ার আনন্দে মাজেদ মিয়ার ভিক্ষে করা বিধ্বস্ত শুকনো মুখটা ঝিলিক দিয়ে ওঠে । 
-আইচ্ছা আগে কও কালাবাই ,  তুমি রাজা অইলে কী করবা?
-আমি , আমি রাজা অইলে ,  এইযে আমরার রাজা আরামের চিয়ারে শইল ডুবাইয়া বইয়া জিমাইয়া জিমাইয়া কতা কইতাছে না , আমি এই রানির লাহান তুলতুলা একটা রানি  লইয়া হুইত্যা লাম্বা একটা  ঘুম দিয়াম । ইস মাজেদরে,
ইস্টিশনের পাক্কার মইদ্যে হুততে শইল যে কী দুক্ষু পাই!  তর বউ তো তরে একটা খেতা বিছাইয়া দেয় ; আমার বউ নাই খেতাও নাই !  হুন , রাজা  অইলে আমি কালি আরামে গুমাইয়াম । অহন ক তুই রাজা অইলে  কীতা করবে?  
-আমি রাজা অইলে ---- গলা পরিষ্কার করে মাজেদ বলে -আমি যত  বালা বালা খাঅন আছে সব কাইয়াম আর দেশে যত ফহির আছে  বেহেরে খাঅন বিলাইয়াম। 
-অইছে তুমরার আর রাজত্বি করন লাগদ না ! 
 -কেরে রে হাসিম্যা ?
হাসিমের নেতিবাচক মন্তব্যে রাজা হওয়ার
সুখানুভবে ছেদ পড়ে যায় মাজেদ আর কালারবাপের। 
-তুমি কালবাই তাকবা গুমাইয়া,আর হেইনদা আরেক দেশের রাজা আইয়া তুমার রাজত্বি লইয়া যাইবগানে। আর মাজেদবাই তো কাইয়া - কাওয়াইয়া দিবা বেকতা শেষ কইরা । হেষে আমরা বিক্ষাও পাইতাম না। কথাগুলি বলে হাসিম খুব হাসে । 
- হ  কইছে তরে ! যেন খুব লজ্জা পায় ওরা দুইজনেই । 
 -তুই রাজা অইলে কীতা করবে ক হুনি ।
-আমার অত রাজা অয়নের শক নাই । আমি রাজা আইয়া সারাদিন ফটুঅলার লগে লগে নাচতারতাম না । দেহ না ,  আমরার রাজাসাইব কাঅনের সময়ডা উতি পায় না । কাইত লয় আর তহনই ফটুঅলা ফটু দেয় নাচাইয়া । লগে লগে রাজাও কাওয়ন তইয়া উটঠ্যা পড়ে। 
-দূর  বেডা বেক্কল ! বলে কালারবাপ হাসিমকে দেয় ধাক্কা । আর অমনি হাসিমের হাতের টিনের থালাটা যায় পড়ে। শব্দ শুনে দোকানের লোক বের
হয়ে এসে ওদের ধমকাতে থাকে- বেটা ফকিরের গোষ্ঠী ,  তোদের জন্য রাতের বেলাও নিস্তার নাই ! যা, ভাগ । এখন কিছু দিতে পারব না ।  
    থালাটা তুলে নিয়ে ওরা দোকানদারকে বকতে বকতে যেতে থাকে -বেডা ছুডুলুকের বাচ্ছা ,  পরের দোহান কাম কইরা কাছ আবার করছ মাতবরি!  রাক ,আগে রাজাডা অইয়া লই,  দেহাইয়ামনে  মজা ! 
         
উপরে