আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০৯:১৩
আজকের গল্প
পিতা-পুত্র
কামরুন্নাহার দিপা
কামরুন্নাহার দিপা
ছেলে হয়েছে! ছেলে!!
এই সংবাদ শুনেই তার চোখদুটো জলে ভরে উঠলো।
আহা ছেলে এসেছে সংসারে। একটা ছেলের বড় শখ ছিল রফিকুল ইসলামের। ছেলে হলো বাবার হাতের লাঠি, বুকের সাহস। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিপদে পাশে দাঁড়িয়ে বলা- আমি আছি বাবা!
ক'মেয়ে নিয়ে উনার আপত্তি নেই। মেয়ে ঘরের আলো। সংসারের শ্রী আসে মেয়েদের হাতের ছোঁয়ায়। রফিকুল ইসলামের তিন মেয়ে। তিনি মেয়েদের ভালোও বাসেন খুব। মেয়ে জন্ম দেয়ার জন্য স্ত্রী মাছুরাকে কোনোদিন কটু কথা বলার মত নিচ মানসিকতা দেখাননি। বরং বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এস এস সি পাশ রফিকুল ইসলাম সবসময় স্ত্রীকে বলেন-বাচ্চা, ছেলে হবে না মেয়ে হবে তার জন্য পুরুষই দায়ী। এটা বিজ্ঞানের কথা। কিতাবের কথা। তুমিও তো লেখাপড়া জানা মেয়ে। জানো না এটা?
মাছুরা মনটা খারাপ করে বলেন- জানি। মেয়ে নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তোমার একটা ছেলের খুব শখ। তোমার শখটা পূরণ করতে পারলে আমার মনে শান্তি লাগতো।
- আমার শখ ঠিক আছে। তবে শখ পূরণ করার মালিক আল্লাহ। আল্লাহ চাইলে হবে ছেলে। না চাইলে নাই। কি আর করা। মানুষের সব শখ পূরণ হয় না। তাই বলে মন খারাপ করে বসে থাকলে তো দুনিয়া চলে না। আমি তো লেখাপড়া শিখে শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। পড়াশোনাতেও খারাপ ছিলাম না। কিন্তু আল্লাহ চাননি। তিনি চেয়েছেন রফিকুল ইসলাম সফল কৃষক হবে। তাই হয়েছি। জীবন এমনই।
নগদ যা পাও হাত পেতে নাও
বাকির খাতা শূন্য থাক।
না,রফিকুল ইসলামের বাকির খাতা শূন্য থাকলো না। ছেলে হলো তাহলে! দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাবে। বাবার কাছে সাইকেল চালানো শিখবে। নদীতে জাল ফেলা শিখবে। বাবার হাত ধরে বড় হবে। মেয়েরা তো একটু বড় হলেই বাবার সাথে দূরত্ব রেখে চলে। মায়া করে, কিন্তু বন্ধুত্ব হয় না। কিন্তু ছেলে হলো বাবার ছায়া। ইস্ ভাবতেই ভালো লাগছে তার। আবার দেখো ছেলে জন্মেই বুঝে গেছে বাবা তাকে সব থেকে বেশী ভালোবাসে।
প্রথম যখন ছেলেকে তিনি দেখলেন তখন ছেলে তারস্বরে চিৎকার করছে। ছেলে নানীর কোলে। সেখান থেকে মাছুরা কোলে নিয়েও থামাতে পারেন না। বুকের দুধও খায় না বাচ্চা। তখন হাত বাড়িয়ে তিনি কোলে নিলেন। বুকের সাথে আলতো করে ধরে দোল দিতে শুরু করলেন। আর কি আশ্চর্য পুঁচকে বাচ্চা একদম চুপ! বুকে মাথা ঠেকিয়ে আরামে ঘুমিয়ে গেল। ঘুমন্ত ছেলেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। কী সুন্দর মুখ! হাত-পাও হয়েছে লম্বা। ছেলে লম্বা-চওড়া হবে মাশাআল্লাহ। ধবধবে পদ্ম ফুলের মতো ছেলের নাম রাখেন কমল।
পিতা-পুত্রের এ যেন অন্যরকমের টান। ছেলে বাবার কাছে ছাড়া খায় না। বাবার কোলে ছাড়া ঘুমায় না। বাবাও তাতে আহ্লাদিত এবং খুশি। যত কাজই থাক ছেলের খাওয়া-ঘুমানোর সময় তিনি উপস্থিত থাকবেনই। মাছুরা বেগম হাসেন। মেয়েরা মুখ ভারী করে বলে-ভাই হওয়ার পর আব্বা আমাদের আর ভালোবাসে না।
তিনি ছেলেকে কোলে নিয়ে দোল দিতে দিতে বলেন-ও আল্লাহ কি বলে আমার আম্মাজানেরা! আমি তো তোমাদের সবাইকে সমান ভালোবাসি। ভাই তো এমন দুষ্টু হয়েছে তোমাদের আহ্লাদ পেয়ে। তিন বোনের আদর পেলে তো এমন হবেই। তোমরা ভাইকে বেশী আদর দাও না তো?
তিন বোন একসাথে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে-তারা কমলকে অনেক আদর করে। কিন্তু কমল একটুও হাসে না। ডাকলেও তাকায় না।
এবার রফিকুল ইসলামের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। কমলের বয়স দশ মাস হলো। লম্বা হয়েছে বেশ। বসতেও শিখেছে। কিন্তু ছেলে ডাকলে তাকায় না। হাসে না কখনো। তার কোলে ছাড়া কারো কাছে যেতে চায় না। এমনকি তার মা খাওয়াতে গেলেও কান্নাকাটি করে। কেমন রাগী চোখে একদিকে তাকিয়ে থাকে। হাতে কোনো খেলনা ধরিয়ে দিলে টেনে ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করে। এ বয়সের বাচ্চাদের সাথে মেলে না ওর আচরণ। তবে অনেক বাচ্চা দেরিতে শেখে। এখনই তেমন ভাবনার কিছু হয়নি। তবে খেয়াল রাখতে হবে।
রফিকুল ইসলাম খেয়াল রাখেন। বাড়ির এবং আশপাশের মানুষও খেয়াল রাখে। বাচ্চাটার রাগী চোখ দেখে নানান আলোচনা করে সবাই। তবে আলোচনাকেও ছাড়িয়ে কমল একদিন তার ছোট বোনের কান কামড়িয়ে রক্তারক্তি করে ছাড়ে। ভাগ্য ভালো রফিকুল ইসলাম আশপাশে ছিলেন। দৌড়ে এসে ছেলের মুখ থেকে মেয়েকে ছাড়িয়ে নেন। ছোট মেয়ের গগনবিদারী চিৎকারে তার মা ও অন্য বোনেরা দৌড়ে এসে ছাড়াতে পারে না। কমলের পিঠে চড়-চাপড় পড়ে। তবুও তার মুখের কামড় শিথিল হয় না। চোখ দুটো যেন ভয়ানক কোনো আক্রোশে ফেটে বের হয়ে যাবে। তখন রফিকুল ইসলাম আসেন। এবং কোমল স্বরে বলেন- বোনকে ছেড়ে দাও বাপ। ও ব্যথা পাচ্ছে।
এক মুহুর্তও দেরি না করে রক্ত মুখে নিয়ে বোনকে ছেড়ে উঠে দৌড়ে এসে বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রফিকুল ইসলাম ছেলেকে কোলে নিয়ে বাড়ির বাইরে চলে আসেন। মেয়ের কান্না তিনি সহ্য করতে পারছেন না। সাথে তার মা ও অন্য বোনেরাও কাঁদছে। বড় মেয়ে চিৎকার করে বলছে-ও ছেলে মানুষ না,পিশাচ,পিশাচ! রক্ত না হলে ওর তৃষ্ণা মেটে না। এখন বাচ্চা তাই কান কামড়ে ছিঁড়ে ফেলছে। বড় হলে মানুষের গলা কামড়ে ছিঁড়ে নেবে।
খারাপ কথা বাতাসের আগে ছড়ায়। সারা গ্রামে কমলের নৃশংস আচরণের কথা ছড়িয়ে পড়ে। এর মাঝেই সে পাড়ার দুটো বাচ্চার কান কামড়ে দেয়। তিন বছর পার করে আধো আধো কথা বলে। তাও শুধু রফিকুল ইসলামের সাথে। অন্যদের সে একেবারেই সহ্য করতে পারে না। বাড়ি এবং আশপাশের সবাই ভয় পায় কমলকে। ছেলের জন্য রফিকুল ইসলামের বুকটা ছিঁড়ে যায়। সাধ্যমত ডাক্তার-কবিরাজ দেখান। কাজ হয় না কিছুতেই।
শুধু তিনি পাশে থাকলে শান্ত থাকে।
কিন্তু ছেলেকে নিয়ে সারাক্ষণ বসে থাকলেও তো তার চলে না। ক্ষেত-খামার দেখা শোনা করতে হয়। গরুগুলোর খাবার জোগাড় করতে হয়। বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নেন উনি যতক্ষণ বাইরে থাকবেন ছেলেকে বেঁধে রেখে যাবেন। মাছুরা মা তো, আপত্তি করেন, কাঁদেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনুমতি দেন। এছাড়া আসলে কোনো উপায়ও নেই।
প্রচণ্ড আপত্তি করে কমল। শুধু বাবা বাঁধছে বলেই দৌড়ে পালিয়ে যায় না। জড়ানো গলায় বলে-তুমি আইতে(এসে) ছেলে (ছেঁড়ে) দেপে(দেবে) আব্বা?
রফিকুল ইসলাম ছেলের মাথায় হাত দিয়ে আদর করে বলেন- আমি এসেই খুলে দেব আব্বা। আমরা একসাথে খাব। বেড়াতে যাব। ঠিক আছে?
কমল বুঝদার মানুষের মতো মাথা নাড়িয়ে বাবাকে সায় দেয়। তবে মনটা একটু খারাপ করে। মন খারাপ করে তাদের বাড়ির সবাই। রফিকুল ইসলামের বড় আদরের ছেলে। উনি আশা করতেন ছেলে বড় হলে হবে তার ভরসা। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আল্লাহ উনাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছেন। যতদিন বাঁচবেন ছেলের একমাত্র ভরসার জায়গা উনাকেই হতে হবে। পাগল এবং বদরাগী ছেলেটাকে ভয় পায় সবাই। প্রচণ্ড দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজে যান তিনি।
সময় গড়াতে থাকে। কমল বড় হয়। কিন্তু মানসিক গঠন তার একটুও পরিবর্তন হয় না। বরং হয়ে ওঠে প্রচণ্ড রাগী এবং হিংস্র। বাঁধা থাকতে চায় না। বড় হওয়ার সাথে সাথে মনে হয় একটু বুদ্ধিও বাড়ে। সেই বুদ্ধি খাটিয়ে দড়ি খুলে ফেলে দুইদিন অনর্থ ঘটিয়ে ফেলে। দুটো মেয়ে স্কুলে যাচ্ছিল। হঠাৎ পাগলা কুকুরের মতো হিসহিস করে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওদের উপর। মেয়ে দুটো অতর্কিত আক্রমণে ও আল্লাহ গো... বলে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে ওঠে। আশপাশের বাড়ি থেকে লোকজন বেরিয়ে এসে দেখে কমল একা দুটো মেয়ের হাত কামড়ে ধরে আছে। হাত থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে। রাগান্বিত লোকজন বেধড়ক পেটাতে শুরু করে।
মাছুরা ছেলেকে পেটাতে দেখে ভয় পেয়ে যান। কিন্তু ছেলেকে ছুটিয়ে আনার সাহস পান না। ছোট মেয়েটা দৌড়ে গিয়ে বাবাকে খবর দেয়। রফিকুল ইসলাম দৌড়াতে দৌড়াতে এসে ছেলেকে রক্ষা করেন। মেয়েদুটোর পরিবারের কাছে গিয়ে কেঁদে বলেন-আমার পাগল ছেলেকে আপনারা মাফ করে দেন। আমি আরো সতর্ক থাকবো যেন ও বাড়ির বাইরে না আসতে পারে। মেয়েদের ডাক্তার দেখাতে হবে। যা খরচ লাগে আমি দেব।
রফিকুল ইসলাম মানুষ খুব ভালো। ছেলেটাকে নিয়ে তার কষ্টের কথা সবাই জানে। তাই ঘটনাটা বেশি দূর এগোয় না। তবে চিন্তার ভাঁজ পড়ে রফিকুল ইসলাম এবং মাছুরা বেগমের। বড় মেয়ে দুটোর বিয়ে হয়ে গেছে। ছোটটা বাড়িতে। কমলের বয়স এখন ষোল। গায়ে অসুরের মত শক্তি নিয়ে সে যখন তখন দড়ি ছিঁড়ে ফেলে যার তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। বুনো জন্তু হলে এতদিন হয়তো মানুষ পিটিয়ে মেরেই ফেলতো। মানুষের বাচ্চা বলে সহ্য করছে। তবে এটা বেশিদিন যে মানুষ সহ্য করবে না তা বোঝা যাচ্ছে। আশপাশের মানুষের নিশ্বাসে যেন চরম বিরক্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী মিলে অনেক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন; কমল যেহেতু একমাত্র তাঁর বাবার কথা বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়,তাই এখন থেকে তাকে রফিকুল ইসলাম সবসময় সাথে সাথেই রাখবেন।
কমলের মহা আনন্দ। বাবার সাথে মাঠে, বাজারে সব জায়গায় ঘুরছে। মাঝেমধ্যে এর তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়। কিন্তু রফিকুল ইসলাম তীক্ষ্ম নজর রাখেন বলে সম্ভব হয় না। তবে কমলের অস্বাভাবিক হাসি, গমগমে গলায় আধো কথা শুনে মানুষ কেঁপে ওঠে। কমলের জন্য ওর বাবাকেও মানুষ ভয় পেতে শুরু করেছে।
"পাগল ছাড়া.." এই ভয়েই তাদের বাড়িতে তেমন কেউ আসতে চায় না। কমল রফিকুল ইসলামের সাথে থাকে বলে ক্ষেতে কাজ করার জন্য জন-মজুর পাওয়া যায় না। শ্রাবণ মাস চলে যায় পাট কাটার মজুর পান না। তাদেরও দোষ দেয়া যায় না। কমল সারাক্ষণ তার বাবার সাথে সাথে থাকে। তখন চুপচাপ। কিন্তু রফিকুল ইসলাম একটু প্রাকৃতিক প্রয়োজনে তার চোখের আড়াল হলেও ক্ষেপে যায়। একদিন তো এক মজুরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তার হাতের ধান কাটা কাঁচি কেড়ে নিতে যাচ্ছিল। ভাগ্য ভালো রফিকুল ইসলাম দ্রুত ফিরে এসেছিলেন। না হলে সেদিন হয়তো খুনোখুনি হয়ে যেত। জীবনের ভয় তো সবার আছে।
ব্যথিত রফিকুল ইসলাম ছেলের হাত ধরে মনে মনে বলেন-তোকে আমার কাছে আল্লাহ পাঠিয়েছেন। সেই সাথে নিচ্ছেন আমার কঠিন পরীক্ষা। পিতার পরীক্ষা। শেষ পর্যন্ত পারবো কিনা জানিনা, তবে আমি চেষ্টা করে যাবরে বাপ।
তিনি লড়ে যান জীবনের সাথে। ভাগ্যের সঙ্গে। শ্রাবণ মাস প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। একে ওকে ধরেন। কেউ রাজি হয় না তার পাট কেটে দিতে। অবশেষে একা একা দা হাতে নেমে পড়েন পাট কাটতে। পাট ক্ষেত টা নদীর পাড়ে। তাই ছেলেকে ব্যস্ত রাখতে তাকেও পাট কাটা শিখিয়ে দেন। অস্ত্র হাতে দেয়া ঠিক হচ্ছে না। তবে ভরসার কথা উনি সাথে থাকলে কমলের মতো ভালো মানুষ আর হয় না। প্রথম দিন কমলের কাজের আগ্রহও ছিল খুব। আনাড়ি হাতে যা করেছে তাতেই তার বাবা খুশি । তার পরদিন আবার বাপ-ছেলে লেগে পড়েন পাট কাটতে। বর্ষার পানি হু হু করে বাড়ছে। সেই সাথে বৃষ্টিও হচ্ছে। জমিতে পানি ঢুকলে দাঁড়িয়ে কাজ করাও কঠিন হয়ে যাবে। আজকের মধ্যে যেভাবেই হোক সব পাট কাটতে হবে। দ্রুত হাত চালান তিনি। কমলের কথা কাজের তাড়নায় একটু ভুলে গিয়েছিলেন। একটু দূরে এগিয়ে গেছেন। হঠাৎ শোনেন চিৎকার-ও আব্বা,ও আব্বা.....
গলাটা কমলের। আর কিছু বলছে না। কিংবা পাগল মানুষ কথা খুঁজে পাচ্ছে না। তবে খুব যে বিপদে পড়েছে তা বোঝা যাচ্ছে। ডাকটা আসছে নদী থেকে। রফিকুল ইসলাম পড়িমড়ি করে ছোটেন। ভেজা মাটিতে দুইবার পড়েও যান। তবে নদীর কাছে পৌঁছে দেখেন,কমল স্রোতের টানে হাবুডুবু খাচ্ছে। একমুহুর্তও চিন্তা করেন না তিনি। ঝাঁপিয়ে পড়েন ছেলেকে উদ্ধার করতে। পাকা সাঁতারু। মনে দৃঢ় বিশ্বাস তিনি কমলকে উঠিয়ে আনতে পারবেন। যদিও নদীর বুক ভরা পানি। স্রোতও খুব। ছেলেকে ধরে টানতে থাকেন পাড়ের দিকে। কিন্তু কমল আসে না। ভয় পেয়েছে। বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পানির ভিতর।
রফিকুল ইসলাম কমলের শক্তির সাথে পেরে ওঠেন না। ছেলের শক্ত হাতের মুঠোয় তার দম আটকে আসে। জোরও কমে যায়। না পারেন ছেলেকে পাড়ে আনতে, না পারেন নিজে ফিরতে।
এর ঠিক ছয় ঘণ্টা পর এলাকার মানুষ লাশ দুটো খুঁজে পায় উজানের বাঁধে। তখনও রফিকুল ইসলাম ছেলেকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে আছেন।