Main Logo
আপডেট : ৯ মার্চ, ২০২৪ ১০:০৮

দেশ কাল

তাহমিনা রহমান

দেশ কাল
পোশাকের ব‍্যাপারে মিসেস রহমান খুবই সচেতন। অফিস বাসা এমনকি ভ্রমণ অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করেন তিনি। তার মতে স্থান কাল পাত্র ভেদে মানিয়ে পোশাক পরতে পারাই স্মার্টনেস।  ব‍্যক্তিগত সহকারী মিস মিম তার বসকে প্রায় অন্ধ ভাবেই অনুসরণ করে আজকাল। মিসেস রহমান ব‍্যাপারটা বেশ উপভোগ করেন।প্রথম প্রথম মিমের এ ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীনতা ছিলো,সময়ের সাথে সাথে সে বদলে নিয়েছে নিজেকে। বসের প্রতি তার নিঃশব্দ একটা ভালোবাসা মনের অজান্তেই তৈরী হয়ে গেছে।  মিসেস রহমানও মিমের সাথে অনেকটাই সহজ যা সচরাচর দেখা যায় না। 
 
    কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে তিনি মিমকে ডাকেন  গল্প করেন, বলেেন -সুযোগ পেলেই গ্ৰামে যাবে বুঝলে- গ্ৰাম বিশাল ব‍্যাপক , এই শহরের মতো ইট কাঠ আর চেয়ার টেবিল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । এই যে দেখো টেবিলের উপর ফুলদানিতে ক'টা ফুল রাখা হয়েছে কিছুক্ষণ পরেই নেতিয়ে পড়বে বাট নেচার ইজ অলয়েজ গ্ৰীন। চারপাশে বিশাল প্রকৃতি ,পথের দুই পাশে হাজার রকমের ফুল ফুটে আছে । জানো একই প্রকৃতি ভোরবেলায় এক রকম দুপুরে-সন্ধ্যায় অন্য রকম। বিশেষ করে আবছা আলো-আধাঁরিতে প্রকৃতি যেন এক রহস্যময় জগত। মিম মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মিসেস রহমানের কথা শোনে। আবদার জানায়-শুনেছি আপনি প্রায়ই গ্ৰামে যান ,একবার আমাকেও সাথে নিন না। সঙ্গী হিসেবে আমি একেবারে মন্দ হবো না ম‍্যাডাম। মিসেস রহমান এমনটাই আশা করছিলেন। ল‍্যান্ড ফোনে কল এসেছে। মিসেস রহমান মিমকে বিদায় দিলেন বললেন - ঠিক আছে নেক্সট প্রোগ্রামে ভেবে দেখবো ।
 
মিম প্রায় পুলিশী জেরায় পড়ে গেল। কী ব‍্যাপার প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ম‍্যাডামের সাথে আড্ডা দিয়েছো । দু'মাস হয়নি জয়েন করেছো এখনি এত মহব্বত। দেখো আবার হিতে বিপরীত না হয় । মিম রহস্যময় মুচকি হাসি ধরে রাখে অনেকক্ষণ তারপর বলে- আচ্ছা আমাদের বস কোন ইয়াং পুরুষ নন একজন মহিলা , অত্যন্ত নম্র ভদ্র তাই না। তার সাথে আমি যেচে কথা বলতে যাইনি তিনি একটা জরুরী বিষয়ে আমার সাথে কথা বলেছেন এইতো । উনার ইচ্ছে হলে কোনোদিন তোমাদের কাউকেও ডেকে কথা বলতে পারেন।
 
   ঠিক সকাল আটটায় মিম বসের বাসায় চলে এসেছে। মিসেস রহমানও রেডি। মিম বসের দিকে তাকিয়ে আছে , অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে। ওয়াইন কালারের ফরাসি সিল্ক শাড়ির সাথে সেইম কালারের স্টোন সেট গহনা। শাড়ি পরা অবস্থায় ম‍্যাডামকে এই প্রথম দেখেছে মিম। গ্ৰামে যাবেন তাই শাড়ি পরেছেন কিন্তু তার নিজের মাথায় বিষয়টা একদমই আসেনি। উল্টো বেছে বেছে সবচে' আধুনিক ড্রেসটাই পরেছে সে। কালো পাথর বসানো লম্বা চাপা টপ সাথে লেগিংস প‍্যান্ট আর মানানসই স্ট্রাইপের বুট । মিম ড্রেসের ব‍্যাপারে কিছুটা ইতস্তত করছে দেখে মিসেস রহমান বলেন-না না তোমার ড্রেস আপ ঠিক আছে। আর শোনো,আমি অফিসের গাড়ি নিচ্ছি না আমার প্রাইভেট কার নিচ্ছি সো ড্রাইভারও যাচ্ছে না  ড্রাইভিং সিটে থাকছো তুমি । মিমের চোখে কিছুটা বিস্ময় দেখে মিসেস রহমান তাকে আশ্বস্ত করেন - ভয় নেই আমি পাশে থাকবো , রাস্তা চিনিয়ে দেবো। আর যদি না পারো আমিই... মিম বসকে থামিয়ে দিয়ে বলে-না না কোনো অসুবিধা নেই ,আপনি পাশে থাকলে অসুবিধা কিসের ।
 
মেইন রোড থেকে বাইপাস দেখিয়ে দিলেন মিসেস রহমান। পাঁচ মিনিট পর আবার মেইন রোড । চারপাশে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। রাস্তা ফোর লেন হচ্ছে । পুরোনো ব্রিজের পাশে নতুন ব্রিজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়েছে , পুরাতন কালভার্টগুলো ভেঙে নতুন করে করা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর ডাইভার্সন। মিসেস রহমান বুঝতে পারছেন মিম গাড়ির নিশানা ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে কিন্তু নিজেও স্টিয়ারিং ধরতে পারছেন না কারণ সিরিয়াস একটা ব‍্যাপারে মোবাইলে ঘনঘন ম‍্যাসেজ আসছে রিপ্লাই দিতে হচ্ছে  । কিন্তু এভাবে রিস্ক নেয়া যাবে না । তিনি একটা ম‍্যাসেজে বিষয়টা জানিয়ে দিয়ে মোবাইল অফ করে দিলেন। এবার মিসেস রহমান মিমকে সরিয়ে নিজেই ড্রাইভিং সিটে বসলেন। পাশাপাশি মিমের ড্রাইভিং ক‍্যাপাসিটি চমৎকার বলে তাকে ধন্যবাদ জানালেন। মিম লজ্জা পেলেও ভিতরে ভিতরে খুশিই হলো।
 
গাড়ি চালাতে চালাতে নিজের গল্প বলেন মিসেস রহমান-জানো আজ থেকে বিশ বছর আগে এটি ছিলো একটি মেঠো পথ। যানবাহনও তেমন একটা ছিলো না। তাই নতুন বউ বলে আমার জন্য নির্ধারিত হলো নদী পথ। সারারাত নৌকায় ছিলাম বুঝলে । মিম আৎকে উঠে- সেকি আপনার ভয় লাগেনি ম‍্যাডাম। -তা কিছুটা তো লেগেছে তবে মজার ব্যাপার কী জানো পরে জেনেছি নেহায়েত বিপদে না পড়লে ওই পথে নাকি সচরাচর কেউ চলাচল করে না ডাকাতের ভয়ে। অথচ আমরা বর কনেসহ কয়েকজন মানুষ ওই নদীর উপরেই রাত কাটিয়েছি। আর আজকে দেখো কত পরিবর্তন। আমি নিজেও কী কম বদলেছি। যে আমি গ্ৰামের পথঘাট কিছুই চিনতাম না অথচ আজ সাত আট বছর যাবৎ বাংলাদেশের শহর গ্ৰামের সব ব‍্যবসা একাই দেখছি । আমার হাজবেন্ড সিঙ্গাপুরের ব‍্যবসা দেখছেন । ইচ্ছা করলে সবই করা যায় বুঝলে। এই যেমন আজকে দুটো প্রোগ্রাম এক সাথে নিয়েছি। স্কুল পরিদর্শন এবং খামার বাড়ি পরিদর্শন। মিমের বিস্ময় কপালে গিয়ে ঠেকেছে। গাড়ির চাকার নিচে ঘস ঘস শব্দ শুরু হয়েছে । গ্ৰামের ভেতরে ঢুকে পড়েছে গাড়ি। পিচবিহীন রাস্তা। সামনে বাজারের মোড়ে রাজ্জাক আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। মশিউর তার বাবার নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন । মিম বুঝে নিয়েছে মশিউর রহমান ম‍্যাডামের হাজবেন্ড।
 
মফস্বলের ছোট্ট বাজার। আধাপাকা রাস্তার দুই পাশে দোকানপাট । কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে বস্ত্রাদি এমনকি ঘরবাড়ি নির্মাণ সামগ্ৰীও রয়েছে । সবশেষে একটা সরকারি হাসপাতাল ডানে রেখে রাস্তা মোড় নিয়েছে বাম দিকে । মূল বাজারটিও আপাতত এখানেই শেষ ।
     খানিকটা হাসপাতালের পেছনে পড়েছে রাজ্জাক আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি। রাস্তার বাঁকে কয়েকজন লোক মাটি খুঁড়ছে। জানা গেলো সৌর বিদ্যুতের খুঁটি বসানো হবে। সবি ঠিক আছে কিন্তু সমস্যা হলো রাস্তা থেকে স্কুল গেট পর্যন্ত জমিটুকু হাসপাতালের । সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। অন‍্যের জমি তাই সংস্কারও করা যাচ্ছে না। বাম পাশে স্কুল সংলগ্ন প্লটটি বিক্রি হবে শুনা গিয়েছিলো কিন্তু জমির মালিক সুযোগ বুঝে  বাজার দর থেকে দশ গুণ দাম চেয়ে বসেছে । মিসেস রহমান ক্ষুব্ধ হয়েছেন। একটি স্কুলের জন্য মানুষ জমি দান করতে পারে অথচ সে কিনা দাও মারার তাল খুঁজছে !
 
  খুব সংক্ষেপে স্কুলের কাজ সারলেন মিসেস রহমান। নতুন হলেও স্কুলে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কম নয়। শিক্ষকরাও বেশ আন্তরিক। গ্ৰামের চেয়ারম্যান মেম্বারসহ বেশ কিছু গণ‍্যমান‍্য ব‍্যক্তিও উপস্থিত ছিলেন।প্রতি ক্লাসেই মেয়ের সংখ্যা বেশি । জানা গেলো ছেলেরা নাকি পড়াশোনার চাইতে কাজের ধান্ধা করে বেশি। মিসেস রহমান ক্লাসে ক্লাসে একই চিত্র দেখে কিছুটা বিরক্ত হয়েছেন বলেছেন-কাজতো করতেই হবে কিন্তু আগেতো পড়াশোনা শেষ করতে হবে। শিক্ষকদের বলেছেন -ওদের ক্লাসে ফেরানোর চেষ্টা করুন। বেশ কিছু দেশি খাবারের ব‍্যবস্থা করা হয়েছে । মিসেস রহমানের পছন্দের খাবার সব । মিমকে দেখা গেলো সেও দেশি খাবার বেশ আগ্ৰহ নিয়েই খেয়েছে।
 
স্কুল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে রহমান'স ফার্ম। দুই পাশে বাঁশঝাড় ফাঁকে ফাঁকে টিনসেড বাড়ি। প্রায় প্রত‍্যেক বাড়িতেই ডিস লাইনের সংযোগ রয়েছে। বিদেশি ফিল্মের কল‍্যাণে পাড়াগাঁয়েও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। মিসেস রহমান ড্রাইভিং সিটে মিমকে বসিয়ে নিজে একবার মোবাইলের ম‍্যাসেজ অপসান চেক করেন। অনেকগুলো ম‍্যাসেজ আনরেড অবস্থায় আছে। মিসেস রহমান উদ্বেগের সাথে দ্রুত রিপ্লাই শেষ করেন। দেখতে দেখতে গাড়ি রহমান'স ফার্মের গেট দিয়ে ' ঝিল পাড় ' বাংলোর সামনে এসে দাঁড়ায়। ফার্মের ম‍্যানেজার আবু তাহের মিঞা আরো কয়েকজন সালাম দিয়ে গাড়ি থেকে কিছু খাবারের প‍্যাকেট নামিয়ে নিয়ে যায়। মিসেস রহমান হল রুমে বসে সবার কুশলাদি জানতে চাইলে আবু তাহের মিঞা ডুকরে কেঁদে উঠে। জানা গেল তার মেয়ে বিউটিকে সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বুলবুল নামে একটি ছেলে তাকে ভাগিয়ে নিয়ে গেছে। বুলবুল একজন ফেরিওয়ালা মেয়েদের জামাকাপড় কসমেটিকস ইত্যাদি বিক্রি করতো। আরো জানা গেলো বিউটিকে সে বিনা মূল্যে অনেক কিছু দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গেছে। সবকিছু শুনে মিসেস রহমানের মনে বিশেষ কোন ভাবান্তর দেখা গেলো না বরং তিনি বললেন - দেখো আবু তাহের মিঞা আমি তোমার মেয়েকে ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। সে সারাক্ষণ সাজুগুজু নিয়েই থাকে।আমারতো মনে হয় তোমার মেয়ে নিজেই বুলবুলের সঙ্গে চলে গেছে। আবু তাহেরের কান্নার আওয়াজ আরো বেড়ে যায় । সে বলে-আমার মা মরা মেয়েটা আমার বুকের ধন । আমি ওরে ছাড়া বাচুম না ।
 
ঘটনার আকস্মিকতায় মিম থ' হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে কয়েকজন মহিলা লেবারকে মিসেস রহমান বলেন মিমকে ফার্মের চারপাশটা ঘুরিয়ে দেখিয়ে আনতে। তারপর আবু তাহেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন- কেঁদোনা দেখি কী করা যায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলেন আচ্ছা ধরো তোমার মেয়ের সন্ধান পাওয়া গেলো কিন্তু সে যদি আসতে না চায় তখন কী করবে !  মানে গত মাসে সে আমার সাথেও চলে যেতে চেয়েছিল। বলেছিল সে শহরে গিয়ে ফিল্মের নায়িকা হবে। আমি তাকে ধমক দিয়েছিলাম ,বলেছিলাম ফিল্মের নায়িকা হতে চাইলে অনেক পড়াশোনা জানতে হয়। তুই বরং স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা কর। আবু তাহের কান্না থামিয়ে বলে - ওই যে টিভিতে বিদেশি সিনেমা দেখে এই সব শিখছে। আল্লা গো অহন আমার কী হইবো , এই দুনিয়াতে আমার কেউ নাই। আল্লাগো তুমি আমার মেয়েডারে আমার কোলে ফিরায়া দেও। মিসেস রহমানের মোবাইলে আবারো ঘন ঘন ম‍্যাসেজ আসছে । তিনি আবু তাহেরকে হিসাবের খাতা নিয়ে আসতে বলেন।
 
 কিছু ফলমুল শাকসবজি মাছ ডিম দুধ গাড়ির পেছনে তুলে দেয়া হয়েছে । সন্ধ্যার কালি মেখে প্রকৃতি এখন রহস্যময়। এ সময় মিমকে ড্রাইভিং এর দায়িত্ব দেয়া নিরাপদ নয় তাই মিসেস রহমান নিজেই ড্রাইভিং সিটে বসেছেন। আবু তাহের মিঞা মিসেস রহমানের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে  গ্লাস নামিয়ে মিসেস রহমান কিছুটা অভয় দিলেন  - চিন্তা করোনা। আমি লোক লাগিয়ে দেখি বিউটির সন্ধান পাওয়া যায় কি না । আবু তাহের হয়তো আরো কিছু বলেছে কিন্তু গ্লাস উঠিয়ে দিয়ে ততক্ষণে গাড়িতে স্টার্ট দিয়েছেন মিসেস রহমান।
 
পরিস্থিতিটা কেমন ঘোলাটে হয়ে গেল , মিসেস রহমানেরও মুড অফ মিম সহসা কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না। মিসেস রহমানই নীরবতা ভাঙেন - তোমার কী মনে হয় বিউটিকে পাওয়া যাবে ? মিম বুঝতে পারে না এত সিরিয়াস ব‍্যাপারেও ম‍্যাডাম কিভাবে স্বাভাবিক থাকেন তবে মিম এবার কিছুটা স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে শুরু করে - বিউটির কোনো ছবি থাকলে পুলিশের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। মিসেস রহমান বলেন-আমার কি মনে হয় জানো বিউটির মতো সহজ সরল মেয়েরা বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। একটা গ্ৰুপ সক্রিয় আছে ছেলে মেয়েদের ভ্রান্ত পথে চালিত করতে। দেশের যুব শক্তিকে অঙ্কুরেই নষ্ট করে দিয়ে প্রকৃত অর্থে দেশের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিতে চায় ওরা । এই সত্য উপলব্ধি করার ক্ষমতা ওদের অর্জন করতে হবে। প্রযুক্তির ভালো মন্দ দুটো দিকই আছে। মিম বেশ বুঝতে পারছে বিউটির ব‍্যাপারটা নিয়ে মিসেস রহমানকে উত্তেজিত হতে দেয়া যাবেনা ,রাস্তার সব জায়গায় ভালো লাইটিং নেই ।  মিম অন্য প্রসঙ্গ টানার চেষ্টা করে।
 
 মিমকে তার বাসায় নামিয়ে দিয়ে নিজের বাড়ি পর্যন্ত আসতে রাত ন'টা বেজে যায়। বাড়ির লোকজন ছুটে এসে গাড়ি থেকে জিনিসপত্র নামিয়ে নেয় । কিছু একটা বলার অপেক্ষা করছে যেন সবাই। মিসেস রহমান কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই গেস্টরুমে গিয়ে দেখেন বিউটি হাত পা ছড়িয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। ফিরে আসেন মিসেস রহমান। গেটের সিকিউরিটি গার্ডকে ডেকে বলেন-আমার অনুমতি ছাড়া কাউকে বাসায় ঢুকতে দেবে না । ওই মেয়েটা আমাদের ফার্মের ম‍্যানেজারের মেয়ে। মাথায় কিছুটা সমস্যা আছে। বাড়িতে না বলে চলে এসেছে । আগামীকাল ওর বাবা এসে নিয়ে যাবে। মিসেস রহমান অনেকটা হালকা বোধ করেন। কোল বালিশটা বুকের কাছে টেনে নিয়ে ভাবতে থাকেন- এক্ষুনি মশিউর ফোন করে হয়তো বলবে- বিউটিকে রেডি রেখো। ওর জন্য সিঙ্গাপুরের টিকিট পাঠাচ্ছি । মনে মনে একটা কড়া জবাব খুঁজছেন মিসেস রহমান ।
 
ক্লান্তিতে জড়িয়ে এসেছে চোখ দুটো হঠাৎ ল‍্যান্ড ফোনটা বেজে উঠে । মিসেস রহমানের বুকটা কেঁপে ওঠে- নিশ্চয়ই মশিউর । ঠোঁট চেপে মনে দৃঢ়তা নিয়ে আস্তে করে রিসিভারটা কানের কাছে নিতেই ওপাশ থেকে মশিউর বলে ওঠে - তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বিউটিকে নিরাপদে বাসায় নিয়ে আসতে পেরেছো । মিসেস রহমানের ক্ষোভ বাড়তে থাকে । এক্ষুণি হয়তো ধমকে উঠতেন কিন্তু ওপাশ থেকে একি কথা ভেসে আসছে ! তিনি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছেন না। বুলবুল পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে । ও এখন পুলিশ হেফাজতে আছে। ও একটা কুখ্যাত নারী পাচারকারী । সিঙ্গাপুরে সবাই ওকে এক ডাকে চেনে । আমি খবর পাচ্ছিলাম ও গ্ৰামের বিভিন্ন এলাকায় অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে । ইতোমধ্যে কয়েকটা মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। আমার ইনফরমেশন অনুযায়ী পুলিশ ওকে ফলো করছিলো । 
 
 মিসেস রহমান রিসিভারটা প্রায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে ঘর জুড়ে পায়চারি করতে থাকেন । হাসতে হাসতে একটা কথাই বারবার বলতে থাকেন - আই লাভ ইউ মশিউর আই লাভ ইউ ।
উপরে