ঘুড্ডি
কোহিনুর রহমান
তুমি কি করো আন্টি...?
আচমকা ছোট্ট কণ্ঠের এমন প্রশ্নে চমকে উঠে নায়লা বেগম। বিকেল বেলায় ইফতার বানাচ্ছিলো সে। ব্যস্ততার শেষ নেই। ছেলে,মেয়ে দু'জনই এ্যাসাইনমেন্টের কাজ করছে দরজা বন্ধ করে। ওদের বাবা অফিস থেকে এখনও বাসায় ফিরে নি। রান্না ঘরের জানালার ফাঁকে এক জোড়া ঠাসা ঠাসা কোমল চোখ।
-ইফতার তৈরি করছি বাবা। তোমার নাম কি? কোথায় থাকো?
আমি রিহান, তুমি আমাকে চেনো না? আমি ঐ যে ঐ বস্তিতে থাকি।
পিছন ঘুরে পাশের সাততলা ফ্ল্যাটের কোনাকোনি বস্তি দেখায় ছেলেটা। কতোইবা বয়স হবে-এই ছয়,সাত।
খোকা, তুমি আলুর চপ খাবে?
হুম খাবো তো!
মায়া ভরা চাহনিতে রিহান জবাব দেয়।
এইভাবে প্রায় প্রতিদিন ইফতার খেতে জানালার কাছে আসে রিহান। নায়লা বেগমের কেমন একটা মমতা ভরা আদর কাজ করে ছেলেটার উপর ।এখন মাঝে মধ্যে সে বাসায় আসে। যেনো পরিবারেরই একজন।
ঈদের দিন বহুবিধ খাবার সামনে দেখে রিহান বলে,তোমাদের বুঝি অনেক টাকা আন্টি?
ক্যন বাবা একথা ক্যান?
জানো আন্টি আমার মা এসব করতে পারে না। আমরা তো গরীব তাই!
না বাবা আমরাও গরীব
তবে যে এতোকিছু রান্না করলে? আমার মা বলে, এসব বড়লোকি খাবার। গরীব মায়েরা করতে পারে না।
মা বলে,আমি বড় হলে আমাদের টাকা হবে। তারপর আমার মা ও এসব রান্না করবে!
নায়লা বেগম রিহানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, দোয়া করি বাবা তুই অনেক বড় হ !
এবার ঈদের এক দিন পর বৈশাখ। রিহান কে একটা লাল জামা দেয় নায়লা বেগম।আর মেলা থেকে একটি ঘুড়ি কিনতে অল্প কিছু টাকা।
আজ পয়লা বৈশাখ। রমজান ও ঈদের দখল সামলিয়ে নায়লা বেগমের শরীরটা একটু নাজুক। সারারাত চোখ লাগেনি। ফজরের পর ঘুমিয়েছে। তাই ঘুম ভাঙে বেলা করে।
রান্না ঘরের জানালায় চোখ পড়ে। দেখে সামনের সাততলা ফ্ল্যাটের নীচে লোকজনের ভীড়। নানাজনে নানা কথা বলছে । কান্নার আওয়াজে কিচ্ছু বুঝা যাচ্ছে না। নায়লা বেগম কাজের মেয়ে সুমিকে পাঠায় ঘটনাস্থলে। মেয়েটা এসে বলে, আপা রিহান ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে। তার রক্তে মাটি ভিজা। সে ঘুড্ডি উড়াইতে ছাদে উঠছিলো!
সুমির কথা শুনে নায়লা বেগমের বুকটায় এক ঝলক আগুন খেলে যায়। সাথে সাথেই সে রিহান বলে এক চিৎকারে হার্ট ফেল করে।